গায়িকা মনোবীণা মিত্র—প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শ্যামল মিত্রের কন্যা। জীবনের এক সময় তিনি ছিলেন আলোয় ভরা মঞ্চে, সকলের প্রিয় মুখ। কিন্তু সময়ের স্রোতে তাঁর জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকার অধ্যায়—মানসিক অসুস্থতা তাঁকে নিয়ে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। তবু তাঁর পাশে আজও অবিচল অভিনেতা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি মনোবীণাকে জেনে, বুঝে, ভালবেসেই বিয়ে করেছিলেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কৌশিক জানান, তিনি না থাকলেও মনোবীণার চিকিৎসা ও যত্নে কোনও ঘাটতি হবে না। সব ব্যবস্থা তিনি করে রেখেছেন। এ কথাই নতুন করে আলোচনায় এনেছে তাঁদের সম্পর্কের মানবিক দিক। যদিও শ্যামল মিত্রের পরিবারে মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।
এই প্রসঙ্গে শ্যামল মিত্রের পুত্র, গায়ক সৈকত মিত্র বলেন, “আমাদের পরিবারে মানসিক সমস্যার তেমন কোনও ইতিহাস নেই। হ্যাঁ, এক দাদার মধ্যে হঠাৎ এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কৌশিকদা সব জেনেই দিদিকে বিয়ে করেছিলেন। ওঁদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের ভালবাসা ছিল।” বিয়ের পর মনোবীণা ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক গৃহবধূ। পরে হঠাৎই শুরু হয় আতঙ্ক—একাকিত্বের ভয়, বন্ধ দরজার আড়ালে আশঙ্কার ছায়া। সৈকতের মতে, “নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটেছিল, যা দিদির সংবেদনশীল মনে গভীর দাগ ফেলেছিল।”
অসুস্থতা বাড়লে মনোবীণা ফিরে আসেন ভাইয়ের সংসারে। সৈকত জানান, “দাদা-দিদির জন্য আলাদা একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই। ওরা খুব ভাল ছিলেন, একসঙ্গে হাঁটতে যেতেন, খাওয়া-দাওয়া করতেন।” কিন্তু দাদার মৃত্যুর পর ফের ভেঙে পড়েন মনোবীণা। আতঙ্কের জেরে তিনি একসময় নিখোঁজও হয়ে যান। অবশেষে এক মানসিক হাসপাতালে তাঁর খোঁজ মেলে। তখনই কৌশিক সিদ্ধান্ত নেন—দিদিকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ “ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে সহানুভূতি দরকার… এখনকার দিনে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই স্বনির্ভর, কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক!” “সিঙ্গেল চাইল্ড বলে ধৈর্যের অভাব, একসঙ্গে থাকতে জানে না!”— দীর্ঘ ৩৪ বছরের দাম্পত্যের অভিজ্ঞতা থেকে, আধুনিক দাম্পত্যের টানাপোড়েন নিয়ে অকপট রত্না ঘোষাল!
আজও সেই আবাসনেই আছেন মনোবীণা মিত্র। নিয়মিত চিকিৎসা চলছে, অনেকটাই সুস্থ ও হাসিখুশি তিনি। শুরুতে চিকিৎসার খরচ বহন করতেন সৈকত, পরে কৌশিক নিজেই সমস্ত দায়িত্ব নিতে চান। সৈকতের ভাষায়, “কৌশিকদা বলেন, তিনিই দিদির সব দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা জানি, তিনি তা-ই করছেন।” এই মানবিক বন্ধনের গল্প যেন মনে করিয়ে দেয়—ভালবাসা কেবল সুখের দিনে নয়, কঠিন সময়েও পাশে থাকার নাম।