টলিউডের স্বর্ণযুগের উজ্জ্বল নক্ষত্র অভিনেত্রী ‘রত্না ঘোষাল’ (Ratna Ghoshal) আজও দর্শকদের মনে রয়ে গিয়েছেন তাঁর সহজাত অভিনয়ের জন্য। প্রায় ৬২ বছরের দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তিনি ছুঁয়েছেন ছোটপর্দা থেকে বড়– দুই মাধ্যমকেই। সাম্প্রতি তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বাংলা মিডিয়াম’-এ। তবে তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ছোটপর্দা থেকে দূরে সরে গিয়েছেন এই প্রবীণ অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, এখনকার ধারাবাহিকগুলোতে গল্পের ধারাবাহিকতা এবং যুক্তির অভাব এতটাই প্রকট যে কাজের আগ্রহই ফিকে হয়ে গেছে।
রত্নার দাবি, “এখনকার সিরিয়ালগুলোর না মাথা আছে, না মুন্ডু।” তাই তিনি নিজের জন্য একটা সীমারেখা টেনে নিয়েছিলেন— রাত ৮টার পরে আর শুটিং নয়। কিন্তু ধারাবাহিকের অগোছালো সময়সূচির কারণে কখনও সেই নিয়ম মানা সম্ভব হয়নি। বারবার এই অনিয়মই তাঁকে তিক্ত করে তুলেছিল, অবশেষে ছোটপর্দার থেকে স্থায়ী বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে সরলেও রত্না ঘোষাল আজও নিজের ছন্দে জীবন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্বামী সুশীল দাসের সঙ্গে গ্যাংটকে থাকেন। সুশীল পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট, তবে শিল্প ও প্রযোজনার সঙ্গে তাঁরও নিবিড় সম্পর্ক ছিল।
১৯৮৯ সালে স্বামী-স্ত্রী মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘ইউনিফোকাস’ নামের প্রযোজনা সংস্থা, যা বহু বাংলা ও হিন্দি ধারাবাহিক নির্মাণ করেছিল। ২০০০ সালের পর স্বেচ্ছায় সেই সংস্থা বন্ধ করে তাঁরা আলাদা পথে হাঁটেন। রত্না অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, সুশীল গ্যাংটকে একটি ফার্ম নিয়ে। বছর ১৭ তিনি একাই পাহাড়ে বসবাস করছেন, কাজের চাপে হয়তো বছরে চার পাঁচদিন যেতে পারতেন রত্না। তবে এখন তিনি স্বামীর সঙ্গে ওখানেই বেশিরভাগ সময় থাকেন। এই দুর্গাপুজো উপলক্ষে স্বামী কলকাতায় এসেছিলেন। এবারের দুর্গাপুজোয় ৩৪ বছরের দাম্পত্যে একসঙ্গে কলকাতায় উৎসব উপভোগ করেছেন রত্না ও সুশীল।
বর্তমানে বিনোদন জগৎ থেকে শুরু করে সর্বত্র যেখানে সম্পর্ক স্বল্পমেয়াদি এবং ভঙ্গুর, সেখানে রত্না-সুশীলের সম্পর্ক উদাহরণ দেওয়ার মতো। এদিন প্রথমবার স্বামীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, “আজকাল সর্ম্পকে দুটো মানুষের একে অপরের মধ্যে সেই বোঝাপড়া আর শ্রদ্ধাটা নেই। আমাদের সময় সিঙ্গেল চাইল্ড খুব একটা ছিল না, কমবেশি আমরা সবাই অনেক ভাইবোন আর বড় পরিবারে বেড়ে উঠেছি। ফলে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। আজকাল স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই যথেষ্ট স্বনির্ভর। আমাদের সময়ও ছিল, কিন্তু স্বাধীনচেতা মনোভাব ছিল না।
আরও পড়ুনঃ “কমলিনী স্বার্থপর, প্রধান চরিত্রকে এমন সুবিধাবাদী আর আত্মসম্মানবোধহীন নায়িকা দেখতে খারাপ লাগে!” “স্বতন্ত্রকে এতোটা চেনার পরেও অবিশ্বাস, পার্বতীকেই বিশ্বাস!”— কমলিনীর সিদ্ধান্তে হতবাক দর্শক, তর্কে সরগরম নেটপাড়া! সত্যিই কি সে ভুল করছে?
আজকাল একা সন্তান হিসেবে বড় হতে হতে মানুষ অনেকটাই আত্ম কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। কারোর কথাই শুনতে চায় না তারা। কিন্তু বিয়ের পর যে একে অপরের কথা মেনে চলতে হয়, মানিয়ে নিতে হয় ভালোলাগা-মন্দলাগা, এটাই তারা মানে না। কাজের সঙ্গে সংসার গুলিয়ে ফেলায় সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সমাজে থাকতে গেলে যেমন হাজার সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তেমন কার্যক্ষেত্রেও সমস্যা থাকবে, কিন্তু সেটা সংসারে টেনে এনে সাংসারিক সমস্যার সঙ্গে মেলানো চলবে না।” অভিনেত্রীর স্বামীও এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেন।