‘স্কুলে যাওয়ার টাকাও ছিল না, বই না পেয়ে থেমে গিয়েছিল পড়া’—বস্তি থেকে অভিনয়ের মঞ্চে উঠে আসা লিলি চক্রবর্তী অজানা কাহিনী চোখে জল আনবে আপনার!

আজ তিনি বর্ষীয়ান অভিনেত্রী, পরিচিত মুখ—তাঁর অভিনয়-নৈপুণ্য মুগ্ধ করেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। কিন্তু সেই উজ্জ্বল পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক অসাধারণ জীবনের কঠিন লড়াইয়ের গল্প। পয়সার অভাবে যেখানে পড়াশোনাই হয়নি, সেখানে ‘লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন’ এর জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যেন এক অলীক স্বপ্নের বাস্তব রূপ। তিনি লিলি চক্রবর্তী। জীবন তাঁকে কখনও কাঁধে চাপিয়ে নেয়নি, বরং কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে নিজেকেই।

ঢাকায় জন্ম হলেও শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে কলকাতার উল্টোডাঙা ও মুরারীপুকুরের বস্তিতে। একটানা অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা লিলির জীবনে ছোটবেলা থেকেই ছিল যুদ্ধ। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল ছিল যে, স্কুলে ভর্তি হওয়া বা ক্লাসে নিয়মিত যাওয়া—এসব ছিল তাঁর কাছে বিলাসিতা। বই-খাতা কেনার সামর্থ্য ছিল না, অনেকসময় পড়াশোনার বদলে রেশন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো পরিবারের জন্য। তবুও জীবন থেমে থাকেনি। লিলির কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা।

পড়াশোনা বন্ধ হলেও থেমে থাকেনি স্বপ্ন। নাটক, থিয়েটার, মঞ্চ—এইসবই ছিল তাঁর প্রথম পাঠশালা। মায়ের সঙ্গে নাটকের রিহার্সাল দেখতে গিয়েই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসার জন্ম। সেই ছোটবেলার মঞ্চে পা রেখেই লিলি বুঝে গিয়েছিলেন, এটাই তাঁর জীবন। আর্থিক সংকট সত্ত্বেও থিয়েটারে নিজেকে গড়ে তুলতে থাকেন। কেউ বই দেয়নি, কিন্তু জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তাঁকে শেখাতে থাকে নতুন কিছু।

অভিনয় জীবনের প্রথম বড় সুযোগ আসে ‘ভানু পেল লটারি’ সিনেমায়। কিন্তু সেই পথও সহজ ছিল না। চেনা মুখ ছিলেন না, পরিচয় ছিল না কোনও বড় পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে। শুধু প্রতিভা আর ইচ্ছেশক্তি ছিল সম্বল। অডিশনের পর অডিশনে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সুযোগ আসে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় টলিউড জয়ের সফর। একে একে কাজ করেন সত্যজিৎ রায়ের মতো কিংবদন্তি পরিচালকের সঙ্গে, ‘শাখা প্রশাখা’-য় অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে।

আরও পড়ুনঃ পিসিমা চরিত্র তো দর্শকের প্রিয়, তবু কেন বারবার বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে ‘জন্মভূমি’ থেকে? নিজের জীবনের অজানা অধ্যায় প্রকাশ্যে করলেন মিতা চ্যাটার্জী!

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে লিলি চক্রবর্তী শুধুমাত্র এক জন অভিনেত্রী নন, বরং হাজারও মেয়ের কাছে অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল প্রতীক। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন—জন্ম যেখানে-ই হোক, স্বপ্ন দেখলে, লড়লে, আর নিজের উপর বিশ্বাস রাখলে সবকিছু সম্ভব। তাঁর জীবনকথা যেন এক প্রমাণ যে, ‘অভাব’ কোনও বাধা নয়, বরং সেটাই হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুরু।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।