বাংলা বিনোদন জগতে অপর্ণা সেনের (Aparna Sen) নাম মানেই আলাদা মর্যাদা। চলচ্চিত্র সমালোচকের কন্যা হয়েও তিনি শুধু বাবার পথ অনুসরণ করেননি, বরং নিজের যোগ্যতায় এক নতুন দিগন্ত তৈরি করেছেন। ছোটবেলা থেকেই সৃষ্টিশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠা অপর্ণা সেনের মা ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশের ভাইয়ের মেয়ে। ফলে সাহিত্য, শিল্পচর্চা এবং সংস্কৃতির আবহ ঘিরেই বড় হয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করলেও ডিগ্রি নেননি, কারণ অভিনয়ের জগতে তাঁর পথচলা শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই।
মাত্র ষোলো বছর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের ‘তিন কন্যা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, আর সেখান থেকেই তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৭০ সালে আবারও সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশনায় ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-তে অভিনয় করেন তিনি। এরপর টানা সাফল্যের জোয়ারে ভেসেছেন। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বসন্ত বিলাপ’ তাঁকে একেবারে জনমানসে পৌঁছে দেয়। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে তিনি কেবলমাত্র একজন সফল অভিনেত্রী ছিলেন না, বরং হয়ে উঠেছিলেন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়, কারণ পরে তিনিই প্রমাণ করে দিলেন, শুধু অভিনয় নয়, পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভা সমান উজ্জ্বল। ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘৩৬ চৌরঙ্গি লেন’। ছবিটি তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি এনে দেয়। এর পরের ছবিগুলির মধ্যে ‘পরমা’, ‘ইতি মৃণালিনী’ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ‘ইতি মৃণালিনী’ ছবিতে তিনি এবং তাঁর মেয়ে কঙ্কনা সেনশর্মা একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন, যা দর্শকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের ছিল। অন্যদিকে, হিন্দি ছবির জগতেও তাঁর পদচারণা রয়েছে।
অর্জুন রামপাল ও কঙ্কনাকে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘দ্য রেপিস্ট’। এভাবেই একাধারে বাংলা এবং হিন্দি ছবিতে সমান দক্ষতায় কাজ করেছেন তিনি। তবে শুধু সিনেমা নয়, সমাজ-রাজনীতি নিয়েও অপর্ণা সেনের স্পষ্ট বক্তব্য বারবার আলোচনায় এসেছে। শুধু চলচ্চিত্রে অভিনয় বা পরিচালনার জন্য আলোচনায় আসেননি তিনি, সামাজিক ইস্যুতে তার খোলামেলা মন্তব্যও বহুবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ঘিরে গড়ে ওঠা নাগরিক মঞ্চ কোনও অপরাধের প্রতিবাদ নয়, ব্যক্তিগত বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি।
অভিনেত্রীর মতে, বরং একই ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ যেভাবে একত্রিত হয়ে রাতের পর রাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছিলেন, সেটাই অনেককে উদ্বুদ্ধ করেছে। অপর্ণা বলেন, মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলে, তবে শাসক যেই হোক না কেন, প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে বাধ্য হতেই হবে। তবে তাঁর এই মন্তব্যকে ঘিরে নানা প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে। একাংশ মনে করেন, এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আন্দোলনকে সমর্থন করছে, এটা সাধারণ মানুষদের জন্য অনুপ্রেরণা।
আরও পড়ুনঃ “আমার মেল ইগো থেকে ভুল সিদ্ধান্ত…আজও কুরে কুরে খায় অপ’রা’ধবোধ!” “সোনালিকে বলেছিলাম সংসার কর, অভিনয় করতে হবে না!”— প্রয়াত স্ত্রীকে নিয়ে অনু’শোচনায় ভুগছেন শঙ্কর চক্রবর্তী! ঋণে’র চাপে ডুবে থাকা থেকে স্ত্রীর অবদান, প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন তিনি!
কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, “আপনাদের উদ্বুদ্ধতা সমাজের কোনও কল্যাণে আসছে না, বরং সর্বনাশ ডেকে আনছে।” কেউ আবার অভিযোগ তুলেছেন, “এতদিন চুপ থেকে হঠাৎ করে সক্রিয় হওয়ার মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে”। এমনকি কেউ বলেছেন, “এমন মানুষেরাই সমাজের ভেতরেই ভগবান কিংবা শয়তানের মতো প্রভাব বিস্তার করেন।” আবার অন্যরা ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন যে, “অন্তত অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন দেখে ভালো লাগছে, নইলে সারাবছর তাঁরা নীরব থাকেন।”