“যাঁরা আমাকে ট্রোল করেন, তাঁরা নিজেদের রুচির পরিচয় দেন”— জাপানের চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বিজয়ার পরে’ নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রোলারদের উদ্দেশে কড়া বার্তা মমতা শঙ্করের!

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তৈরি হল এক নতুন অধ্যায়। কখনও কখনও বক্স অফিসের ভিড়ে কোনও ছবি হারিয়ে যায়, আবার বছর কয়েক পরে সেই একই ছবি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে বাংলা সিনেমাকে গর্বিত করে। দুর্গোৎসবের আবহে সম্পর্ক, অভিমান আর পুনর্মিলনের গল্প নিয়ে আসা ‘বিজয়ার পরে’ এবার এমনই এক সম্মানের আসন দখল করেছে।

পরিচালক অভিজিৎ শ্রীদাসের নির্মিত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০২৩ সালে। বাণিজ্যিক সাফল্য খুব একটা না পেলেও সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। আর এবার সেই ছবিই জায়গা করে নিল জাপানের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ওসাকা এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের (OAFF) ২১তম আসরে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই প্রথম কোনও ভারতীয় বাংলা ছবি ওই উৎসবে প্রদর্শিত হল। নিঃসন্দেহে এটি বাংলা সিনেমার জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্য।

জাপানের ওসাকায় বর্তমানে চলছে বিশ্ববিখ্যাত এক্সপো ২০২৫–২০২৬। সেই সময়েই আয়োজিত হচ্ছে এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যেখানে জাপানি, কোরিয়ান, চীনা সিনেমার পাশাপাশি এবার জায়গা পেল ‘বিজয়ার পরে’। পরিচালক অভিজিৎ শ্রীদাস এবং প্রযোজক সুজিত রাহা ছবির নির্মাণপদ্ধতি ও বাংলা সিনেমার সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। মমতাশঙ্কর, স্বস্তিকা মুখার্জি, দীপঙ্কর দে-সহ একাধিক অভিজ্ঞ অভিনেতার অভিনয় ছবিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।

অভিনেত্রী মমতাশঙ্করের মতে, “একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই চরিত্র আমার কাছে বিশেষ চ্যালেঞ্জ ছিল। পুরস্কার পাওয়া আনন্দের হলেও, জাপানের দর্শকের সামনে নিজেদের ভাষার ছবি পৌঁছে দেওয়া আরও বড় গর্ব।” সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত কটাক্ষের মুখে পড়লেও তিনি বলেন, “আমি কখনও কাউকে কটাক্ষ করিনি। তাই ট্রোলের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করি না। তবে ছবির স্বীকৃতি বাংলারই জয়।” অন্যদিকে স্বস্তিকা মুখার্জির বক্তব্য, ছবির চরিত্র মৃন্ময়ী মানুষের জীবনের টানাপোড়েনকে ফুটিয়ে তোলে, আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছবির জায়গা পাওয়া তাঁদের কাছে এক বিশেষ প্রাপ্তি।

আরও পড়ুনঃ “ছোটবেলা থেকেই রান্না করে তারপর স্কুলে যেতে হতো!”— শৈশবের সংগ্রাম থেকে আজও বাস্তব জীবনকে সহজভাবে সামলান অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য! সংসার, আধ্যাত্মিকতা আর অভিনয় মিলিয়ে তিনি গড়েছেন নিজস্ব জীবনদর্শন!

পরিচালক অভিজিৎ শ্রীদাস বলেন, “‘বিজয়ার পরে’ হল নীরবতা, স্মৃতি আর পুনর্মিলনের গল্প যা কেবল বাংলার নয়, সমগ্র বিশ্বের দর্শকদের হৃদয় ছুঁতে পারে। এই স্বীকৃতি কেবল ছবির দলকেই নয়, গোটা বাংলা সিনেমাকে নতুনভাবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরল।” সত্যিই, একসময়ের সমালোচকদের প্রশংসিত ছবিই আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মুকুট পরে বিশ্বমঞ্চে বাংলার নাম উজ্জ্বল করল।

You cannot copy content of this page