তিনি ছিলেন এমন একজন মুখ, যাঁকে পর্দায় দেখলেই মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য— সব মিলিয়ে এক নিঃশব্দ দীপ্তি ছিল তাঁর মধ্যে। হ্যাঁ, তিনি অভিনেত্রী ছিলেন কিন্তু এখন আর নন! কথা হচ্ছে, ছোটপর্দার অভিনেত্রী ‘রুশা চ্যাটার্জী’কে (Roosha Chatterjee) নিয়ে। তিনি এমনই এক নাম, যিনি এক সময় বাংলার টেলিভিশনের পর্দা মাতিয়েছিলেন নিজের সহজ অথচ গভীর অভিনয় আর মিষ্টি স্বভাব দিয়ে। আজও তাঁর ভক্ত সংখ্যায় একটুও কমেনি। কিন্তু তিনি বেশ কিছু বছর আগেই চলে গেছেন পর্দার আড়ালে।
অভিনেত্রী হিসেবে রুশার সাবলীলতাই ছিল তাঁর বড় শক্তি। ১৩ বছরের অভিনয়জীবনে একের পর এক চরিত্রে তিনি দর্শকদের মন জয় করেছিলেন। প্রথম ধারাবাহিকে ছিলেন নায়িকার বোন, কিন্তু সেই ছোট চরিত্রেই নজর কেড়েছিলেন দর্শক ও পরিচালকরা। আর সেই থেকেই তাঁর উত্থান। খুব দ্রুতই তিনি নায়িকার আসনে পৌঁছে যান। ঋজু বিশ্বাস এর বিপরীতে, স্টার জলসার ‘তোমায় আমায় মিলে’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেই রুশা পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার চূড়ায়। তাঁর অভিব্যক্তি, সংলাপ বলার ভঙ্গি আর কণ্ঠস্বরের অনন্যতা তাঁকে করে তুলেছিল আলাদা।

তবে রুশার প্রভাব শুধু পর্দাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর উচ্চতা, সৌন্দর্য, আর আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব তাঁকে অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার নাম করে তুলেছিল। তিনি কখনও নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে আলোচনার বিষয় করেননি। ক্যামেরার সামনে কখনও পরিবারের কথা তোলেননি। এমনকি কোনও সহ অভিনেতা বা অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপারেও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বিতর্ক, অশালীন পোশাক বা অহংকার— এসব থেকে দূরেই থাকতেন তিনি। তাঁর জীবনের অংশই ছিল না, কোনরকম বিতর্কে জড়িয়ে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা।

নিঃশব্দে নিজের মতো করে কাজ করে গেছেন তিনি, আর এটাই তাঁকে আলাদা করে তুলেছিল শিল্পী এবং মানুষ হিসেবে। কেরিয়ারের একদম উজ্জ্বল সময়ে, যখন আরও বড় সুযোগ তাঁর দরজায় কড়া নাড়ছিল, তখনই অভিনয়কে বিদায় জানান তিনি। বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করে নতুন জীবনে পা রাখেন। ২০১৬ সালে শেষবার তাঁকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল, তারপর থেকে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন অভিনয় থেকে। ধীরে ধীরে সব সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন। বর্তমানে একমাত্র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটিও কেবল পরিবারের জন্য সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
আরও পড়ুনঃ নিজের গলা নিয়ে একসময় ছিল আক্ষেপ, আজ সেই গলাতেই বাজে গওহর জানের সুর! অকপট স্বাগতা মুখোপাধ্যায়
বিয়ের পরে পরিবার ও কাছের মানুষ ছাড়া সমস্ত ফলোয়ার রিমুভ করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি মাতৃত্বের নতুন অধ্যায়ে যে তিনি পা রেখেছেন, এই বছর দীপাবলীর আগে কেউ তা টেরও পাননি! তাঁর মা হওয়ার খবর জানা যায় দীপাবলির শুভেচ্ছা থেকে। সম্প্রতি দুর্গাপুজোয় দেশে ফিরেছিলেন কিছুদিনের জন্য। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে গিয়েছেন বিদেশে, স্বামীর কাছে। আজ প্রায় এক দশক হয়ে গিয়েছে পর্দায় তাঁকে না দেখা, তবু ভক্তদের মনে তাঁর উপস্থিতি আজও ঠিক ততটাই জীবন্ত। বড় বা ছোট পর্দা— যে জায়গাতেই হোক, রুশা চ্যাটার্জীর মতো শিল্পীরা হারিয়ে যান না কখনও। তাঁরা থেকে যান মানুষের হৃদয়ে, নিঃশব্দ আলো হয়ে।






