একসময় নিজের কণ্ঠস্বর নিয়ে মনখারাপ ছিল স্বাগতা মুখোপাধ্যায়ের। মনে হতো, লতা মঙ্গেশকর বা আশা ভোঁসলের গান তাঁর গলায় মানায় না। কিন্তু সময় যেন নিজেই সেই দুঃখ মুছে দিয়েছে। গওহর জানের গানে ডুবে গিয়ে বুঝেছিলেন, তাঁর কণ্ঠে অন্য রকম গভীরতা আছে— সেই গলাতেই বাজে বেগম আখতার, শুভা মুদ্গল কিংবা ইলা অরুণের সুরের ছোঁয়া। স্বাগতার কথায়, “ভাগ্যিস আমার গলা আলাদা! তাই গওহরের গান আমার গলায় মানিয়েছে। নটীর সুরে আমিও যেন নতুন করে নিজেকে চিনেছি।”
দীর্ঘ এক দশক ধরে গওহর জানের চরিত্রে মঞ্চে ফিরছেন স্বাগতা। প্রথমবার এই চরিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ির মঞ্চে, ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়। তারপর নিজের নাটকেই দ্বিতীয়বার নটীর ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এত বছর পরও প্রতি বার মঞ্চে ওঠার আগে একই রকম ভয় আর সতর্কতা কাজ করে তাঁর মধ্যে। অভিনেত্রীর কথায়, “নটীর কথা বলতে গিয়ে একটা তারিখ বা তথ্য ভুল বলে ফেললে ইতিহাস বিকৃত হবে। তাই প্রতি বার নতুন করে চরিত্রটা হয়ে উঠি আমি।”
এই চরিত্রের সঙ্গে তাঁর যেন রক্তের সম্পর্ক। দেবশ্রী রায়ও স্বাগতার অভিনয়ে মুগ্ধ। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, “এক মুহূর্তের জন্যও অন্যমনস্ক হতে পারিনি। ওর অভিনয় অসাধারণ।” আর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া? কেউ কেউ গওহরের জীবনের প্রতিটি ঘটনা, তারিখ পর্যন্ত মুখস্থ জানেন— তাই তাঁদের সামনে অভিনয় করা মানেই বাড়তি দায়িত্ব।
গওহর জানকে মঞ্চে একাধিকবার ফিরিয়ে আনার কারণও জানিয়েছেন স্বাগতা। তাঁর মতে, “একজন শিল্পীকে যত বেশি করে জানব, ততই তিনি আমাদের চর্চায় থাকবেন। আমার নাটকে হয়তো কিছু দিক ধরা যায়নি, অর্পিতার নাটকেও হয়তো কিছু বাদ আছে। তাই চাই, দর্শক দুটোই দেখুন, নটী আরও বেশি দিন বেঁচে থাকুক আমাদের মনে।”
আরও পড়ুনঃ “কাব্য আসার পর আমি যেন আরও শান্ত হয়েছি, আরও ভেবে কথা বলি, অনেক কিছুতেই নতুনভাবে ভাবতে শিখেছি!” দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম বদলে দিয়েছে টলিকুইন কোয়েল মল্লিককে
অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ‘গওহর জান’ দেখা হয়নি এখনও, তবে তাঁর কাজের প্রশংসা স্বাগতার মুখেই। বললেন, “খুব ইচ্ছে ওঁর ‘গওহর জান’ দেখার।” নিজের অভিজ্ঞতায় একটাই উপলব্ধি— গওহর জান কেবল তওয়ায়েফ ছিলেন না, ছিলেন এক অগ্রণী শিল্পী, যিনি ভারতীয় সঙ্গীত ও বিনোদন জগতকে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। আর স্বাগতা মুখোপাধ্যায়ের চোখে, মঞ্চে গওহরের পুনর্জন্ম মানেই গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো।






