কলকাতার অন্যতম সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে কর্তব্যরত এক চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে অভিনেতা তথা বিধায়ক ‘কাঞ্চন মল্লিক’ (Kanchan Mullick) এবং তাঁর স্ত্রী ‘শ্রীময়ী চট্টরাজ মল্লিক’ (Sreemoyee Chattoraj) এর বিরুদ্ধে। ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার, ৯ জুলাই, যখন হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে এক গুরুতর অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা চলছিল। সেই সময় ওয়ার্ডে আচমকাই প্রবেশ করেন কাঞ্চন এবং তাঁর স্ত্রী। চিকিৎসকের অনুরোধ উপেক্ষা করে তাঁরা নিজেদের আত্মীয়ার রক্তচাপ মাপার জন্য চাপ দিতে থাকেন বলে অভিযোগ।
চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী, হাসপাতালে নিয়ম অনুসরণ না করেই জনপ্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন কাঞ্চন এবং শ্রীময়ী। ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক ডঃ মেহবুবর রহমান, যিনি বিভাগীয় প্রধানও বটে, সে সময় একটি শিশুর জরুরি চিকিৎসা করছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া না মেনেই তাঁকে অন্য রোগীকে দেখা এবং প্রেসক্রিপশনে নির্দিষ্ট ওষুধ লিখে দেওয়ার দাবি তোলা হয়। বাধা দেওয়াতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অভিযোগ, এরপর শুরু হয় হুমকি, অপমান এবং পেশাগত প্রশ্নবিদ্ধ করা।
এই ঘটনা কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ডিরেক্টরের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ)। তাঁদের দাবির মূল কথা ছিল—এই ধরনের ঘটনা চুপ করে মেনে নেওয়া হলে ভবিষ্যতে হাসপাতালের নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়বে। একজন জনপ্রতিনিধি যদি চিকিৎসকদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের সময় এভাবে হস্তক্ষেপ করেন, তা হলে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হবে বলেই মত চিকিৎসক সমাজের।
হাসপাতালের তরফে এখনও থানায় সরাসরি কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের না করা হলেও, শুক্রবার তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতা পুলিশকে একটি ইমেল পাঠিয়ে গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সিনিয়র রেসিডেন্ট প্রণীত রায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, কোনও রকম পক্ষপাত ছাড়াই সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। তাঁর কথায়, “আমরা চাই ঘটনার নিরপেক্ষ অনুসন্ধান হোক এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নয়তো চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।”
আরও পড়ুনঃ “রোগ লুকাতে বাধ্য অনেকে, কারণ সমাজ এখনও ক্যা’ন্সারকে ছোঁয়াচে ভাবে!” “অস্পৃশ্যতা নয়, স্বীকৃতি চাই!” — অভিনব উদ্যোগে ক্যা’ন্সারে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেতা চন্দন সেন!
উল্লেখ্য, যাঁদের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে—তাঁরা হলেন রাজ্যের এক বিধায়ক এবং তাঁর স্ত্রী, যাঁরা নিজেরাও জনজীবনে পরিচিত মুখ। এই ঘটনার বিরুদ্ধে কাঞ্চন মল্লিক ও শ্রীময়ী চট্টরাজ মল্লিক ইতিমধ্যেই তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে এবার তদন্তের দাবি উঠেছে স্বাস্থ্য ভবন এবং প্রশাসনিক মহলেও। চিকিৎসকদের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ এবং আতঙ্ক যেন ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট না ডেকে আনে, এখন সেদিকেই নজর সবার।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।