নাট্যজগতের অভিজ্ঞ অভিনেতা ‘চন্দন সেন’ (Chandan Sen) বরাবরই সমাজসচেতন শিল্পী হিসেবেই পরিচিত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি যেভাবে সমাজের কিছু নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন, তা কেবল একজন শিল্পীর বক্তব্য নয়, বরং এক মানবিক প্রতিবাদের সুর। একসময় যেভাবে কু’ষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের সমাজ একঘরে করে দিত, আজও ঠিক সেই মনোভাব দেখা যাচ্ছে ক্যা’ন্সারের (Cancer) ক্ষেত্রেও। চন্দনের কথায়, এখনো সমাজের একাংশ মনে করে ক্যা’ন্সার ছোঁয়াচে, আর সেখান থেকেই জন্ম নিচ্ছে অস্পৃশ্যতার মতো মানসিকতা।
এদিন সংবাদ মাধ্যমকে চন্দন জানিয়েছেন, তাঁর নিজস্ব নাট্যদল ‘অশোকনগর নাট্য আনন’-এ দু’জন অভিনেত্রী রয়েছেন, যাঁরা ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত। কিন্তু রোগ লুকিয়ে রাখতে হয় তাঁদের, কারণ রোগ প্রকাশ পেলে সমাজ থেকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে। এমনকি পাড়ার মানুষ তাঁদের এড়িয়ে চলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানেও ডাকা হয় না তাঁদের। চন্দনের মতে, এমন দৃষ্টিভঙ্গি কেবল অজ্ঞতা নয়, অমানবিকতাও বটে। যদিও নিজেও ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত চন্দন, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এমন বৈষম্যের শিকার হননি।
তবে হাসপাতালে গিয়ে যেভাবে অন্য রোগীদের সঙ্গে সমাজের ব্যবহার দেখেছেন, তাতে তিনি ব্যথিত। এই অন্ধতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই চন্দনের নতুন উদ্যোগ। ক্যা’ন্সার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং সৌরভ দত্তর সহযোগিতায় তাঁর নাট্যদল আয়োজন করতে চলেছে একটি বিশেষ নাট্য সন্ধ্যার। ১২ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে চারটি নাটক মঞ্চস্থ হবে, যেখানে অভিনয় করবেন শুধুই ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত শিল্পীরা। ‘আর্য-অনার্য’, ‘নূতন অবতার’, ‘অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি’ এবং ‘স্বর্গীয় প্রহসন’ নামের এই চারটি নাটক হবে।
এই নাটকের মধ্য দিয়েই উঠে আসবে জীবনের সংগ্রাম, বেঁচে থাকার তাগিদ এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার বার্তা। চন্দনের মতে, এই প্রয়াস কেবল সচেতনতা গড়ে তুলবে না, বরং রোগাক্রান্তদের মনোবলও বাড়াবে। “আমরা ব্রাত্য নই, আমরাও পারি” — এই বার্তা পৌঁছে দিতে চায় তাঁর নাট্যদল। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হলে এমন সাহসী উদ্যোগ খুব প্রয়োজন। শুধুই রোগীর চোখে না দেখে তাঁদের একজন শিল্পী, একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করলেই বদলাবে চিত্রটা।
আরও পড়ুনঃ “আমার জীবনটা কোনও ঘর কন্ট্রোল করবে না”— অভয়া আন্দোলনের পর একের পর এক শো বাতিল, লোকে বলে ‘দিদি চাপ আছে’, অভিযোগ দেবলীনা দত্তর
এই কর্মসূচি আপাতত শহরেই সীমাবদ্ধ হলেও ভবিষ্যতে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দিতে চান চন্দন তাঁরা এই উদ্যোগ। আর তাতে স্থানীয় ক্যা’ন্সার আক্রান্তদেরও নাটকের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে চন্দনের। এই অভিনব প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে যেন অভিনয় হয়ে উঠছে প্রতিবাদের ভাষা, আর থিয়েটারের মঞ্চ হয়ে উঠছে বদলে যাওয়া সমাজের প্রতিচ্ছবি। অভিনেতা বরাবরই ব্যতিক্রমী পথে হাঁটার জন্য খুব জনপ্রিয়, আর এই উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে সর্ব স্তরে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।