“যদি আমার দলে অসভ্যতা করে থাকে, তাহলে তোমার দল আরও বেশি করেছে!” “পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছ, কিন্তু আমার পেশাদারিত্ব ঠিকই আছে, তোমারটা নেই!”— মঞ্চ বিতর্কে জোজোর অভিযোগের ভিত্তিতে এবার মুখ খুললেন পৌষালী! জানালেন ঘটনার সত্যতা?

সম্প্রতি সংগীতজগতে খানিক অস্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে ‘জোজো মুখোপাধ্যায়’ (Jojo Mukherjee) ও ‘পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়’কে (Pousali Banerjee) ঘিরে। সাধারণত সংযত স্বভাবের জোজোকে এভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়তে কেউ আগে দেখেননি। একটি মঞ্চানুষ্ঠান শেষে সমাজ মাধ্যমে লাইভে এসে তিনি জানান, নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও পরিশ্রমের জোরেই আজ তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন, কাউকে হেয় না করেই। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা তাঁর মনে গভীর হতাশা এনে দিয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, সংগীত জগত ছোট— এখানে পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা খুব জরুরি।

তবুও, কিছু ঘটনার ফলে তিনি বাধ্য হয়েছেন প্রকাশ্যে কথা বলতে। ঘটনার সূত্রপাত হয় বিজয়গড় উদয়চক্র ক্লাবের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। প্রায় ১৭ বছর পর সেই মঞ্চে পারফর্ম করতে গিয়ে জোজো দেখেন, সাউন্ড চেক শেষে তাঁদের দলের বাদ্যযন্ত্রগুলো অন্য এক টিমের লোকজন বিনা অনুমতিতে সরিয়ে দিয়েছে। তাঁর দাবি, পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর টিম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাধারণত সংগীতানুষ্ঠানে সাউন্ড চেকের পর বাদ্যযন্ত্রে হাত না দেওয়াই রীতি, কারণ এতে পুরো সাউন্ড ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই আচরণকে তিনি ‘অসভ্যতা’ বলেই মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, যদি তাঁর দলের কেউ এমন কাজ করত, তবে দায় তিনিও নিতেন। তবুও, দর্শকদের ভালোবাসার কথা ভেবে জোজো অনুষ্ঠানটি শেষ করেন, যদিও মনে ক্ষোভ থেকেই যায়। তাঁর মতে, মঞ্চ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়— সবার সমান অধিকার সেখানে। শিল্পী হিসেবে নম্রতা আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় গুণ। অহংকারের জায়গা যদি বড় হয়ে যায়, তাহলে তা একদিন নিজের শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ভিডিওটি সমাজ মাধ্যমে প্রকাশের পর, অভিযুক্ত সংগীত শিল্পী পৌষালীও কিন্তু চুপ থাকেননি!

তিনিও সকাল হতেই সমাজ মাধ্যমে একটি ভিডিও করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। তিনি প্রথমেই বলেন, “জোজো দি’কে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি। আমাদের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো, সেখান থেকে আমার একটাই কষ্ট লাগলো যে জোজো দি একবার নিজের মুখে আমাকে এসে অভিযোগটা জানালেন না। সম্পূর্ণ ঘটনা না জেনেই তিনি, প্রথমত স্টেজে গান গাইতে গাইতে এবং অনুষ্ঠান শেষ করে সমাজ মাধ্যমে অত রাতে আমার টিম এবং ম্যানেজার তথা আমার স্বামীকে নানান কটু কথা বললেন।

হ্যাঁ, মানছি যে স্টেজটা কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, আমি নিজেও সেটা মনে করি। কিন্তু ঘটনার সত্যতা না জেনে ‘বাবা’ তোলা, ‘হরিদাস পাল’ বলা উচিত হয়নি একদম। তুমি আমার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছ, কিন্তু আমি বলব আমার দল পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই ঠিক সময়ে পৌঁছেছিল সাউন্ড চেক করতে। সেখানে তোমার দল অনেক দেরিতে আসে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের আগে ছেড়ে দিতে হয়। অনুষ্ঠান শুরু করার একটা চাপ আসতে থাকে শেষে যখন আমরা সাউন্ড চেক করতে উঠি। স্টেজটা দৈর্ঘ্যে বড় হলেও, প্রস্থ ছিল অত্যন্ত ছোট।

বাদ্যযন্ত্র রাখতে অসুবিধা হওয়ায়, আমার দলের একজন তোমার দলের লোকের সঙ্গে কথা বলেছিল। তারা অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে জানিয়েছে, পারবে না সরাতে। বাধ্য হয়ে তাই ক্লাব কমিটির সাহায্য নিয়ে আমরা মাত্র দু’ফুট সরিয়েছি বাদ্যযন্ত্রগুলো। জোজো দি আমি এটা ডিজার্ভ করি না গো! তোমার দলের ছেলেরা আমার দলের ছেলেদের অপমান করেছে। তুমি সত্যিটা না জেনে আমায় এত গুলো কথা বললে। আমি জীবনে সত্যি কিছু করে উঠতে পারিনি, না গেয়েছি সিনেমার গান, না আছে কোনও অ্যাওয়ার্ড– শুধু হাত-পা নেড়ে মাটির গান গাই।

আরও পড়ুনঃ “পৌষালী আমার সঙ্গে অসভ্যতামি করেছে, সবকিছু বাবার সম্পত্তি না!” “অনেক শিল্পীকে আসতে দেখেছি, মাটিতে মিশতে দেখেছি, অহংকারের শেষ ভালো নয়!”— ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জোজো মুখোপাধ্যায়, নবীন শিল্পীর ব্যবহারে চরম কড়া ভাষায় বার্তা তাঁর! ঠিক কী ঘটেছে সংগীত শিল্পীর সঙ্গে?

তাই আমার দল যদি অসভ্যতা করে থাকে, তোমার দলও করেছে।” জোজোর পর পৌষালীর এই বক্তব্যে সংগীতমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, কেউ তাঁর ক্ষোভকে যথার্থ বলেছেন, আবার কেউ মনে করছেন, বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যেত, সমাজ মাধ্যমে অযথা বিতর্কের সৃষ্টি করার দরকার ছিল না। তবে একথা অস্বীকার করা যায় না, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পীদের পারস্পরিক সম্মান ও পেশাদারিত্বের প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এসেছে। আপনাদের কী মতামত এই বিষয়ে? জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!