“উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসতেন, অন্যের মুখ দেখতে চাইতেন না উত্তম কুমার!” “খুব খুঁতখুঁতে মানুষ, চেনা লোক দেখেও কথা বলতেন না!”— মহানায়ক সম্পর্কে রঞ্জিত মল্লিকের বিস্ফো’রক স্বীকারোক্তি! অভিনেতার আচরণে হতবাক নেটপাড়া!

টলিউডের ইতিহাসে এমন কিছু অভিনেতা রয়েছেন, যাঁদের নাম শুনলেই একসঙ্গে মনে পড়ে যায় কঠোর চরিত্র, সংলাপের গর্জন আর অভিনয়ের গভীরতা। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম অভিনেতা ‘রঞ্জিত মল্লিক’ (Ranjit Mallick), দর্শকদের কাছে যিনি আজও ‘বেল্ট ম্যান’ নামেই খ্যাত। একাধিক ছবিতে তিনি নিজের বেল্ট খুলে ভিলেনদের শিক্ষা দিয়েছেন, তখন থেকেই দর্শকের মনে গেঁথে যায় সেই দৃশ্য, পরবর্তীতে এই নামকরণ।

একসময় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের দাদা হয়ে একচেটিয়া বাণিজ্যিক তাঁকে দেখা গিয়েছিল। তিনি সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায়, হাতে সেই পরিচিত বেল্ট নিয়ে ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সংলাপ “চাপকে পিঠের চামড়া তুলে দেব” এখনও এক প্রজন্মের কাছে কিংবদন্তি হয়ে আছে। অথচ সেই কঠোর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক গভীর সংবেদনশীল মানুষও! তিনি শুধু অ্যাকশন বা কঠোর চরিত্রেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না।

টলিউডের ‘বেল্ট ম্যান’-এর অভিনয়জীবনে যেমন ছিল সমাজ সংস্কারের বার্তা, তেমনই ছিল হাস্যরস, রোম্যান্স আর মানবিক আবেগের মিশ্রণ। তিনি নিজে বলেছিলেন, ‘শুক্র’ ছবিতে একটি ছোট্ট শিশু যখন ক্ষুধায় কাঁদছিল, তখন সেটের বাইরেও তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল। একজন শিল্পী কতটা গভীরভাবে চরিত্রের ভেতর ডুবে থাকেন, তাঁর স্বীকারোক্তিতেই এটা স্পষ্ট। তবে, রঞ্জিত মল্লিকের কেরিয়ার শুরু হয়েছিল অন্য ধারার ছবি দিয়ে।

মৃণাল সেনের ‘ইন্টারভিউ’ ছবির হাত ধরেই তিনি প্রবেশ করেন অভিনয়ের জগতে। পরবর্তীতে ‘কলকাতা ৭১’ এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘শাখা প্রশাখা’তে তাঁর উপস্থিতি দর্শকের চোখে তাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল। পরে ‘মৌচাক’-এর মতো হাস্যরসাত্মক ছবিতেও মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে সাবলীল অভিনয় করে প্রমাণ করেন, চরিত্রের বৈচিত্র্য সামলাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সম্প্রতি মহানায়কের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করতে গিয়েই তিনি বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে বসলেন!

আরও পড়ুনঃ “আমি চাই কবীর বিশ্বাস করুক, কাব্য ওর ক্ষতি চাইবে না!” “আমার ভাই বা বোন নেই, কিন্তু অনুভব করতে পেরেছি বিশ্বাস থাকাটা জরুরি”— ‘স্বার্থপর’-এ কোয়েলের কণ্ঠে এক মায়ের আকুতি! ভাইবোনের সংঘর্ষ ঘিরে কোন ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা বলেন তিনি?

রঞ্জিত মল্লিক জানান, “অভিনয়ের প্রতি প্রচুর নিষ্ঠা আর আত্মসমর্পণ দেখেছি মহানায়কের মধ্যে। একটা কথা না বললেই নয়, সেবার ‘দুই পৃথিবী’ ছবির শুটিং করছিলাম আমরা। সেটে চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হলে আমরা সকলেই হাসি বা কয়েকটা কথা বলি, এটাই সভ্যতা। কিন্তু পাছে এইসব করতে হয়, তিনি উল্টোদিকে মুখ করে বসতেন! অভিনয়ের মধ্যে এতটাই ডুবে যেতেন যে, কারোর মুখ দেখতে পছন্দ করতেন না। খুবই খুঁতখুঁতে মানুষ ছিলেন উনি।” এই অভিজ্ঞতার দিয়েই স্পষ্ট, কীভাবে দুই প্রজন্ম— উত্তম এবং রঞ্জিত নিজেদের কর্মনিষ্ঠা দিয়ে গড়ে তুলেছেন এক সোনালি যুগ, যা আজও বাংলা চলচ্চিত্রের গর্ব।