বাংলা টেলিভিশন (Bengali Television) ইন্ডাস্ট্রিতে এখন এক অদ্ভুত সময় চলছে। একদিকে নিত্যনতুন মুখেরা কাজ পাচ্ছেন, অন্যদিকে বহু অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজের অভাবে দিশেহারা! ঠিক যেমনটা হয়েছে অভিনেত্রী ‘রূপালি রাই ভট্টাচার্য’র (Rupali Rai Bhattacharya) সঙ্গেও। টানা দুই দশক ধরে একের পর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেও আজ তিনি কর্মহীন! জি বাংলার ‘আনন্দী’ ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্র শেষ হওয়ার পর থেকে যেন, নতুন সুযোগের দরজাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছে।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার নিজের মনের কথা এবং ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি সমাজ মাধ্যমে! কোনও লজ্জা বা দ্বিধা না রেখেই রূপালি বলছেন, কাজ চাইতে যাওয়া তাঁর কাছে কখনওই ‘ইগো’র বিষয় নয়। বরং এটাকে তিনি নিজের পেশার প্রতি দায়িত্ব বলেই মনে করেন। তাঁর কথায়, ইন্ডাস্ট্রিতে আজ যেন একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে— যেখানে যোগ্যতা নয়, সম্পর্ক আর সুবিধা দেখেই কাজ মিলছে। অনেক সময় ফোন করলেও কেউ ধরেন না, মেসেজের উত্তরও আসে না। অথচ তিনিই সেই মানুষ, যিনি ২০ বছর ধরে টানা অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করেছেন।
এখন যখন কাজের খিদে নিয়ে এগোচ্ছেন, বারবার শুনতে হচ্ছে যে ‘তোমার মতো চরিত্র থাকলে বলব।’ এই ‘তোমার মতো’ কথাটাই সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে তাঁকে! অভিনেত্রীর দাবি, তিনি কোনও নির্দিষ্ট জনরার মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে চান না। সিরিয়াল হোক বা সিনেমা, ভালো চরিত্র পেলেই কাজ করতে রাজি। এমনকি বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও এমন প্রকল্পে কাজ করতে চান, যেখানে শিল্পী হিসেবে তৃপ্তি পাবেন। তাঁর কথায়, “আমি তো একাধিক ছবিতে কাজ করেছি, কিন্তু ছোট পর্দায় কাজ করাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
তবে এই পেশায় এখন অনেকেই থিয়েটার বা ধারাবাহিকের শিল্পীদের হেয় করে দেখেন, যা রূপালির কাছে অত্যন্ত কষ্টকর। সমাজ মাধ্যমে তিনি লেখেন, “যখনই কাউকে বলি কাজের জন্য তিনি সব সময় বলেন তোমার মত চরিত্র থাকলে বলব। এই ‘তোমার মত’ চরিত্র বিষয়টা আজও বুঝলাম না। আমি একজন পেশাদার অভিনেত্রী আমার কাজ চরিত্রর মতো হওয়া। আমি ডাক্তার নই যে গাইনো নিয়ে পড়েছি তাই হাড়ের রোগ জানিনা বা ইঞ্জিনিয়ার নই যে সিভিল নিয়ে পড়েছি মেটালার্জিটা বুঝি না।
এই তোমার মত চরিত্র বিষয়টা খুব বোকা বোকা। সময় বদলাচ্ছে, ছুতো গুলোও বদলালে ভালো হয়।” তিনি আরও বলেন, আজকের টলিউডে এক ধরনের ‘অসুস্থ পরিবেশ’ তৈরি হয়েছে। যারা সত্যিকারের যোগ্য, তারা সুযোগ পাচ্ছেন না। বরং অনেকে যোগ্যদের প্রতিভা দেখে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন! সেই কারণেই আজ একজন অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর কাজ চাওয়াটাকেও অনেকেই তুচ্ছ করে দেখেন। তাঁর মতে, এই মনোভাবই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই অভিনেত্রী তুলিকা বসু, অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী এবং সত্যম মজুমদারও সরব হয়েছিলেন একই বিষয়ে।
আরও পড়ুনঃ”প্রতিপত্তিশালী পুরুষদের সঙ্গে ওঠাবসা ‘সেট বৌদি’র, যেভাবে ঠোঁট আঁকে কিছু বলার নেই!” “ধারাবাহিক থেকে বের করে দেয় যাঁকে অপছন্দ!”— ছোটপর্দার এক সহ-শিল্পীকে নিয়ে বিস্ফোরক সংঘশ্রী, জানালেন চার বছর কাজ করেননি তাঁর জন্য! চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি, ইঙ্গিত কাকে নিয়ে?
উল্লেখ্য, এক সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁর স্মৃতিচারণা করে বলেন, “বাপ্পা দা সবাইকে অনুপ্রেরণা দিতেন, ধারাবাহিকে কাজেই নাকি চর্চা সবচেয়ে ভালোভাবে হয়।” সেই কথাগুলো আজও তাঁর মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। ইন্ডাস্ট্রির এই সমস্যা কবে মিটবে, তা যদিও এখন সময়ের হাতে। তাই সব হারিয়েও লড়ে যেতে চান রূপালি— নিজের যোগ্যতার জায়গা আবার ফিরে পাওয়ার আশায়।






