একটা সময় ছিল, যখন শহরের যেকোনো নাট্য মঞ্চের সামনে সন্ধে নামলেই দেখা যেত দর্শকের লম্বা লাইন। সেসব দর্শক এসেছেন একটাই কারণে—সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। আজকের দিনে যেখানে নাটকের দর্শক টানাই চ্যালেঞ্জ, তখন শুধুমাত্র একজন শিল্পীর নামেই আসনভর্তি হয়ে যেত গোটা অডিটোরিয়াম। এমন জনপ্রিয়তা খুব কম শিল্পীর ভাগ্যেই জোটে। সাবিত্রীদেবী ছিলেন সেই বিরল ব্যক্তিত্ব, যাঁর নামে বিশ্বাস করত গোটা নাট্যজগত।
রঙমহল থেকে স্টার থিয়েটার, বিশ্বরূপা থেকে সরকারিনা—শহরের প্রতিটি নামী নাট্যমঞ্চেই তাঁর উপস্থিতি মানেই বিশেষ কিছু। দর্শক জানতেন, সাবিত্রীদেবী মঞ্চে মানেই নাটকে প্রাণ থাকবে, অভিনয়ে থাকবে আবেগ, আর গল্পের মধ্যে থাকবে বাস্তবতার ছোঁয়া। তাঁর অভিনয়ের স্বতঃস্ফূর্ততা দর্শকদের মুগ্ধ করত প্রতিবার। একসময় এমন হয়েছিল যে, নাটকের ব্যানারে শুধু তাঁর নাম থাকলেই অগ্রিম টিকিট শেষ।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের এই ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন প্রবীণ অভিনেতা ধীমান চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “অনেক সময় দেখা যেত, নাটকে তেমন টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। হল ফাঁকা। তখনই নির্দেশ আসত—সাবিত্রীদেবীকে নাও। ওঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই টিকিট যেন গরম হাওয়ার মতো উড়ে যেত।” এমন বহুবার হয়েছে, যেখানে প্রায় বাতিল হয়ে যাওয়া শো শুধুমাত্র তাঁর উপস্থিতিতে সফল হয়ে উঠেছে।
সাধারণত কোনও নাটক জনপ্রিয় হয় পরিচালনা, চিত্রনাট্য বা সমষ্টিগত পারফরম্যান্সের জন্য। কিন্তু সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি একাই টেনে আনতেন ভরা হলের দর্শক। ধীমানবাবু বলেন, “প্রফেশনাল থিয়েটারে সে সময় ভাটা পড়েছিল। কিন্তু সাবিত্রীদেবীকে শুধু বললেই হল। ওঁর মুখটা পোস্টারে থাকলেই দর্শক আসতেন। তাঁর মতো দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস খুব কম শিল্পীর মধ্যেই দেখেছি।”
আরও পড়ুনঃ সোনার ডিম পাড়া হাঁস ছিলো মৌ! ওকে কি ছাড়া যায়? গোটা পরিবারটা ওর পয়সায় খেত” — মহুয়া রায়চৌধুরীর অকাল প্রয়াণ নিয়ে বি’স্ফো’রক বন্ধু রত্না ঘোষাল!
আজ মঞ্চনাটকের সেই পুরোনো রূপ না থাকলেও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা প্রেরণার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন। তিনি শুধুমাত্র একজন দক্ষ অভিনেত্রী নন, তিনি এক আবেগ, এক ঐতিহ্যের ধারক। নতুন প্রজন্মের থিয়েটারকর্মীদের জন্য তাঁর জীবনটাই হয়ে উঠতে পারে এক পাঠ্যপুস্তক। সাবিত্রীদেবীর নাম আসলেই প্রমাণ মেলে—মঞ্চ আজও জীবন্ত, কারণ একসময় সেখানে এমন প্রাণ ছিলেন যিনি নিজেই মঞ্চকে আলোকিত করতেন।