বাংলা ছবির স্বর্ণযুগে পর্দায় একসময়ে ঠিক যেমনভাবে আলো ছড়িয়েছিলেন ‘মহুয়া রায়চৌধুরী’ (Mahua Roy Choudhury), তেমনই তাঁর বাস্তব জীবনে আলো ছড়িয়েছিলেন প্রাণের বান্ধবী ছিলেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘রত্না ঘোষাল’ (Ratna Ghoshal)। দু’জনেই একসঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন অভিনয় জগতে, একসঙ্গে রেয়েছে অজস্র স্মৃতি। শোনা যায় একে অপরের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই একে অপরের পাশে থেকেছেন তাঁরা। কিন্তু সেই বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে যায় মহুয়ার অকালে প্রয়াণে।
যদিও এখনও সেই বন্ধুত্বের স্মৃতি রত্নার হৃদয়ে সমানভাবেই প্রখর, আজও মহুয়ার কথা বলতে গিয়ে ভিজে ওঠে চোখ তাঁর চোখ। সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে উঠে এল মহুয়ার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু অজানা কথা, যার সূত্রপাত রত্নারই এক মন্তব্য থেকে। বন্ধু মহুয়ার জীবনের এমন একটি গল্প সবাইকে শোনালেন রত্না যা অনেকেই জানতেন না। তিনি বলেন, কীভাবে ভালোবাসার মানুষকে পেতে সমাজের সাথে লড়াই করে , পারিবারিক চাপ এবং অভিনয়ে সাফল্যের বাইরে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন মহুয়া।
জীবনের বহু চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যেও মহুয়ার পাশে ছিলেন তাঁর স্বামী তিলক চক্রবর্তী, আর তাঁদের বিয়ের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন খোদ রত্না ঘোষাল নিজেই। রত্নার কথায় উঠে আসে, মহুয়ার বাবা মেয়েকে তখন বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না, কারণ মেয়ে তখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। অভিনয় করে যা রোজগার করতেন মহুয়া, তাই দিয়েই চলত পুরো সংসার। ফলে বিয়ে করলে যে এই আয়ের উৎস হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাবে, সেই ভয়েই বাধা দিয়েছিলেন বাবা।
রত্না ঘোষাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মৌ নিজেই বলেছিল, ওর বিয়ে দেওয়া হবে না। কারণ ও তো পরিবারের সোনার ডিম পাড়া হাঁস!” তবে যতই সামাজিক বাধা থাক, একজন সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জীবনে ভালবাসার হাতছানি খুবই স্বাভাবিক। সেই টানেই একদিন মৌ সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার, রেজিস্ট্রি করেই হঠাৎ এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে সেরে ফেলেন মহুয়া ও তিলক। এই বিয়েতে ‘কন্যাপক্ষ’ হয়ে ছিলেন রত্না, আর ‘পাত্রপক্ষ’ ছিলেন স্বয়ং তরুণ কুমার।
বিয়ের দিন বিখ্যাত অভিনেতা- অভিনেত্রীদের সমাগম ঘটে, স্বয়ং মহানায়ক উত্তম কুমারের বাড়িতেই বসেছিল সেই আসর। রত্না আরো বলেন, “যেখানে উত্তমদা আর বেণুদির আতিথেয়তায় খুব আনন্দের সাথে কেটেছিল সেই স্মরণীয় দিন। সেই দিনের হাসি, আড্ডা, এমনকি তোলা ছবিও আজও স্মৃতির অ্যালবামে অক্ষত।” অভিনেত্রীর একটাই আক্ষেপ এই বন্ধুকে খুব বেশিদিন তারপর আগলে রাখতে পারেননি, হঠাৎই মৃত্যু ঘটে মহুয়ার।
আরও পড়ুনঃ মোহনার সঙ্গে থাকাতেই রয়েছে স্বস্তি, বিরক্তির কারণ হলে উঠছে শুভলক্ষী! বলছে আদৃত! অচেনা আদিকে মেনে নিতে পারছে না শুভ! তবে কি এবার বদলে যাচ্ছে নায়ক নায়িকার গল্প? দু’জোড়া নায়ক-নায়িকা নিয়ে এগোবে ধারাবাহিক?
আজ মহুয়া আর তিলক কেউই আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রত্না ঘোষালের মনে এখনও জীবন্ত সেই দিনগুলো, সেই মুহূর্তগুলো। সমাজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যেভাবে মহুয়া নিজের সুখের কথা ভেবে, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। আর প্রকৃত বন্ধু হিসাবে যিনি আজও আগলে রেখেছেন প্রিয় বান্ধবীর স্মৃতি, তিনি রত্না ঘোষাল। এক বন্ধুর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এমন গল্প বাংলার বিনোদনের ইতিহাসে চিরকাল অমূল্য হয়ে থাকবে।