“অভিনয়টা পারিশ্রমিকের জন্য নয়, ভালোবেসে করতে হয়, “সারাদিন ক্যামেরা অন করে ঠোঁট মিলিয়ে কেউ অভিনেতা হতে পারে না”— স্পষ্ট বক্তব্য শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের! অভিনেত্রী হতে চলা মেয়েকে কী উপদেশ দিলেন তিনি?

কিংবদন্তি অভিনেতা রবি ঘোষ (Rabi Ghosh) তাঁকে পুত্রের স্থানে বসিয়েছিলেন। বাবা ছিলেন নাম করা অভিনেতা, তবুও ছেলেকে কখনোই নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অভিনেতা বানানোর চেষ্টা করেননি বরং রবি ঘোষের সুপারিশেই অভিনয়ে প্রথম সুযোগ মেলে তাঁকে। কথা হচ্ছে ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee) কে নিয়ে। বর্তমানে তিনি টলিউডের পাশাপাশি বলিউড এবং দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির একজন নাম করা অভিনেতা। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি কেমন? ঠিক কী আদর্শ মেনে চলেন তিনি?

প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে, যেখানে সবচেয়ে কম উপার্জন করা লোকটার হাতেও দামি দামি ফোন, সেখানে শাশ্বত বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত ফোনই ব্যবহার করতেন না বলে শোনা যায়। এমনকি এখন উনি ফোন ব্যবহার করেন ঠিকই কিন্তু সেটা শুধুমাত্র দরকারের জন্য। ওনার নম্বর পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রির কিছু সীমিত লোকজনের কাছেই আছে বলে জানান তিনি। খুব দরকার ছাড়া কাউকেই নম্বর দেন না।যদি যোগাযোগ করতেই হয় তবে স্ত্রীয়ের নম্বরে তাঁকে পাওয়া যায়।

সমাজ মাধ্যমে একটা অ্যাকাউন্ট আছে ঠিকই, কিন্তু অভিনেতা জানান, সেটা ম্যানেজিং টিম পরিচালনা করে থাকে। অভিনেতার যখন মনে হয় কোনও বিশেষ মুহূর্ত ভাগ করবেন, তাঁরাই সেইসব ছবি অনুরাগীদের সাথে ভাগ করে। তিনি বলেন, ফোন এমন একটা বস্তু যা মানুষকে নিজের লক্ষ্য থেকে আরও দূরে নিয়ে যায়। মূলত সেই কারণেই তিনি সকালে কাজে বেরোনোর সময় ফোন বন্ধ করে রাখেন। এই প্রসঙ্গেই সাক্ষাৎকারে তিনি এদিন অনেককিছু বলেন।

প্রশ্ন করা হয়, বর্তমানে সমাজ মাধ্যমের ফলোয়ার্সের সংখ্যা দেখে অভিনয়ে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তিনি এটাকে কীভাবে দেখেন? শাশ্বতর কথায়,”ফলোয়ার্স দেখে কাস্টিং, এটা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। সারাদিন যদি কেউ ক্যামেরা অন করে গানের সুরে ঠোঁট মিলিয়ে নাচ করতে থাকে আর কারোর সেটা দেখে মনে হয় যে দারুণ অভিনেতা বা অভিনেত্রী হবে, তাহলে বলব একদম ভুল! সেটা যদি যতই তাহলে সব ছবিই হাউসফুল হতো।”

তিনি আরও বলেন,”এই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো সিঙ্গেল-স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া। এখনও অনেকে আছেন যাঁরা পিভিআরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন না, বরং নন্দনে গিয়ে ছবি দেখেন।” বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে এত কম কাজে কেন দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাতে বরাবরই আমি ছিলাম টিভির অভিনেতা, খুব একটা বড় পর্দায় সুযোগ কেউই দেয়নি তখন। ‘কাহানি’তে অভিনয় করার পর বম্বেতে একটা পাকাপাকি জায়গা হয়েছে বলা যায়।

আরও পড়ুনঃ “নাচটা ছাড়িনি, শুধু পড়াশোনাটাকে আগে রেখেছি”— ‘পান্তাভাতের কুণ্ডু’ বলে যাঁকে চিনত বাংলা, সেই দীপান্বিতা আজ কোথায়? লাইমলাইট ছেড়ে কোন স্বপ্নের পেছনে ছুটছে সে? ফিরবে কি আবার মঞ্চে?

এখানেও কাজের সুযোগ বেড়েছে। তা ছাড়া যে কাজ করে আমি নিজে আনন্দ পাব না, সেটা দিয়ে কিভাবে অন্যকে আনন্দ দেব? সেই জন্য অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। বাড়িতে স্ক্রিপ্টের পাহাড় জমেছে, কেউ ফিরিয়ে নেয় না। বর্তমানে অভিনেতার কন্যা ‘হিয়া’ অভিনয়ে জগতে পা রাখতে চলেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কখনোই কোনও প্রোডিউসারের কাছে ওর জন্য সুপারিশ করি না, বরং ওর নিজের দক্ষতা অনেক বেশি সেটা ওর কাজ দেখলেই বোঝা যায়। আমি শুধু বলেছি অভিনয়টা পারিশ্রমিকের জন্য নয়, বরং ভালোবেসে করতে হবে।”