“আইনগত বিচ্ছেদ হয়নি, ওকে শেষ দিন পর্যন্ত রাজার হালেই রেখেছি”, “আজও মনে হয়, দূরে থাকাটাই আমাদের সম্পর্কের শ্রদ্ধাটুকু বাঁচিয়ে রেখেছিল”— স্বামীর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক নিয়ে অকপট শকুন্তলা বড়ুয়া! তিক্ততা নয়, আত্মসম্মানের দূরত্বে দাঁড়িয়ে স্বামীর পাশে থেকেছেন তিনি!

বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নাম ‘শকুন্তলা বড়ুয়া’ (Shakuntala Barua), যাঁর জীবনটা রূপালি পর্দার বাইরেও কম নাটকীয় নয়। অভিনয়ে দক্ষতা তো ছিলই, কিন্তু জীবন তাঁকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছিল বারবার। সেই সব পরিস্থিতিতে তিনি কখনও মাথা নত করেননি। নিজের সিদ্ধান্তে, নিজের শর্তে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে অকপটে বলেছেন। যেখানে শব্দে ছিল না কোনও অভিযোগ, বরং ছিল অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা এক বাস্তবচিন্তার ভাব।

অভিনয়ে আসার শুরুটা ছিল শকুন্তলার জন্য একেবারেই সহজ নয়। কলকাতার এক রক্ষণশীল পরিবারের পুত্রবধূ হয়ে তিনি অভিনয় করবেন, এমন ভাবনাও তখন সমাজে অনেকের কাছে ছিল অগ্রহণযোগ্য। স্বামী কোল ইন্ডিয়ার উচ্চপদস্থ আধিকারিক, পরিবার ভর্তি আমলা— তাঁর চারপাশের পরিবেশে অভিনয় যেন এক প্রকার নিষিদ্ধ বিষয়। তবু তিনি গানে চর্চা রেখেছিলেন, থেমে থাকেননি একেবারে। তবে বড় পর্দায় আসার সুযোগ যখন এল, তখন পরিবারের বাধার পাশাপাশি স্বামীর বিরোধিতাও ছিল স্পষ্ট।

জানা যায়, স্বামীর অনুমতি আদায় করতে তাঁকে বহু অনুরোধ করতে হয়েছিল। একটি ছবিতে একমাত্র অভিনয়ের সুযোগই মিলেছিল, তাও শর্তসাপেক্ষে। ছবির নায়ক উত্তমকুমার, যাঁর সঙ্গে প্রায় প্রতিটি নায়িকার সম্পর্ক গুঞ্জন– এটাই যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়! সেখান থেকেই দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় টানাপোড়েন, সন্দেহ, মানসিক অশান্তি। যদিও স্বামীর সন্দেহের কারণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি, তবুও শকুন্তলা বরাবরই নিজের কাজের প্রতি সৎ ছিলেন। জীবনের সেই কঠিন অধ্যায়ে অভিনয়ই যেন তাঁর ভরসা হয়ে ওঠে।

এত সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শকুন্তলা বড়ুয়া দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি সম্মান রেখেছেন আজীবন। শোনা যায়, নাকি নেশা করতেন, এমনকি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বামী। সেই সময় অভিনেত্রী কর্মজীবন কিছুটা সাফল্যের আলো দেখতে শুরু করেছে, রোজের মানসিক অশান্তি থেকে নিস্তার পেতেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান তিনি। শেষ বয়স পর্যন্ত আইনত বিচ্ছেদ না করলেও দুটি আলাদা বাড়িতে আলাদাভাবেই জীবন যাপন করেছেন অভিনেত্রী এবং তার স্বামী।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রীকে বলতে শোনা যায়, “স্বামী নিজের থেকেই চলে যেতে চাইছিলেন, আমি বাধা দিইনি। বলেছিলাম আমার বাড়িতে থেকে এমন জীবন যাপন আমি সহ্য করবো না। আলাদা থাকলেও শেষ জীবন অব্দি স্ত্রীর ধর্ম পালন করে গেছি। রান্না করে খাবার পাঠাতাম। যেটা খেতে ভালোবাসে, সেটাই রান্না করতাম। ফোন করে বলতাম যে আজ এটা বানিয়ে পাঠাচ্ছি। শেষ জীবন পর্যন্ত আমি এবং দুই মেয়ে ওকে রাজার হালে রেখেছি।

আরও পড়ুনঃ স্টার জলসার সময় সূচিতে বিরাট রদবদল! একগুচ্ছ নতুন ধারাবাহিকের আগমনে অনিশ্চিত ‘গৃহপ্রবেশ’-এর বেজে গেল বিদায় ঘন্টা! শোলাঙ্কি-স্বস্তিকার কামব্যাকেই কি ইতি টানবে ঊষসী-সুস্মিতের জুটি?

দেখাশোনা করার লোক থাকলেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। আইনত বিচ্ছেদ হয়নি আমাদের তবে মানসিক শান্তির জন্য এই দূরত্বটা প্রয়োজন ছিল।” আজকের দিনে দাঁড়িয়েও শকুন্তলা বড়ুয়া জীবনের প্রতি সেই একই নিষ্ঠা ও সংযম নিয়ে চলছেন। অভিনয়জীবনের অভিজ্ঞতা, পারিবারিক জীবনের ওঠাপড়া— সব মিলিয়ে তাঁর জীবন এক নিঃশব্দ সংগ্রামের গল্প। কিন্তু এই সংগ্রামে নেই কোনও হাহাকার, বরং আছে গভীর আত্মমর্যাদা, যা তাঁকে করে তোলে অনন্য।