“হোমওয়ার্ক পরে হবে, কিন্তু নাটকটা মিস করবি না!” — পড়াশোনার চেয়েও নাটক ছিল বড়? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের অজানা দর্শন তুলে ধরলেন মেয়ে!

তিনি শুধুই এক জন অভিনেতা নন, বাঙালির আবেগের নাম, টলিউডের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যিনি শুধুমাত্র সিনেমার চরিত্রে জীবন্ত হয়ে উঠতেন না, বরং তাঁর ব্যক্তিত্ব দিয়েও মন জয় করে নিতেন হাজারো দর্শকের। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু যেন টলিউডের এক যুগের অবসান। তবে আজও বহু মানুষের মনে তিনি জীবন্ত, জীবনের নানা প্রান্তে তাঁর প্রভাব থেকে যাচ্ছে ছায়ার মতো। সম্প্রতি অভিনেতার কন্যার আবেগঘন এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তাঁর একান্ত পারিবারিক দিক, যা আরও একবার প্রমাণ করে দিল, মানুষ সৌমিত্র ছিলেন আরও অনেক বেশি মিষ্টি, সংবেদনশীল ও প্রাণবন্ত।

তাঁর অভিনয় জীবন যতটা বর্ণময়, ততটাই বৈচিত্র্যময়। একের পর এক কালজয়ী ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘অপুর সংসার’, ‘চারুলতা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘সোনার কেল্লা, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘কনি’, ‘রূপকথা নয়’ এবং ‘ময়ূরাক্ষী’। প্রতিটি ছবিতেই তিনি চরিত্রকে যেভাবে জীবন্ত করে তুলেছিলেন, তা আজও পাঠকের মনে গেঁথে রয়েছে। তাঁর দক্ষ অভিনয় কেবল চরিত্র নয়, জীবনকেও স্পর্শ করেছিল।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে স্মৃতিচারণ করে জানান, তাঁর বাবার কাছে ‘সংস্কৃতি’ ছিল নিছক শখ নয়, বরং জীবনদর্শন। ছোটবেলায় হোমওয়ার্ক থাকলেও বাবা জোর করে নিয়ে যেতেন নাটক দেখতে। বলতেন, “হোমওয়ার্ক তো রোজই হবে, কিন্তু এই নাটকটা মিস করলি তো জীবনের একটা বড় অভিজ্ঞতা মিস করবি।” শুধুমাত্র নাটক নয়, কোনও এক্সিবিশন বা আর্ট গ্যালারিতে নামিদামি কিছু হলে, তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন মেয়েকে। বাবার এই অনন্য শিক্ষার ধারা মেয়ের জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। এমন একজন অভিনেতা যার জীবনজুড়ে ছিল শিল্পচর্চা, তিনি নিজের সন্তানকেও সেই পথেই গড়ে তুলেছিলেন।

সাধারণ মানুষের চোখে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কিংবদন্তি। কিন্তু পরিবারের কাছে তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত সরল, মিষ্টি মানুষ। কোনও অহংকার ছিল না, বরং ছিলেন একজন অত্যন্ত খোলামেলা, মননশীল পিতা। মেয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ, সব মিলিয়ে এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন তিনি। সাধারণত আমরা তারকাদের শুধুই তাঁদের গ্ল্যামারাস দিক দেখি, কিন্তু সৌমিত্রর মেয়ের কথায় উঠে এল, মাটির কাছাকাছি থাকা এক স্নেহময় পিতার ছবি।

আরও পড়ুনঃ “অভিনয়ে নয়, শরীর দেখিয়ে জনপ্রিয় হতে চায় এখনকার শিল্পীরা!” “সৌন্দর্য্য হারালেই ডি’প্রে’শনে চলে যায়, সু’সাই’ডের চিন্তা আসে!” “লোকে শিল্পীকে মনে রাখে, সৌন্দর্য্যকে নয়!”— নয়া প্রজন্মকে নিয়ে সোজাসাপটা মন্তব্য মমতা শঙ্করের!

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একাধারে অভিনেতা, সংস্কৃতির ধারক, এবং এক অনুপ্রেরণামূলক পিতা। মেয়ে তাঁর স্মৃতিতে যেভাবে বাবাকে তুলে ধরেছেন, তা প্রমাণ করে শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন এক আদর্শ মানুষ। তাঁর মৃত্যু যেন এক পর্দা নামা, কিন্তু যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন—থিয়েটার, চিত্রকলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা—তা আজও অনেকের জীবনের ভিত গড়ে দিচ্ছে। হয়তো আমরা তাঁকে দেখতে পাই না, কিন্তু অনুভব করি প্রতিটি শিল্পানুভবে। বাবা হিসেবে, মানুষ হিসেবে—তিনি আজও বেঁচে আছেন মেয়ের কথায়, দর্শকের মনে।