‘মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক কৃষভি’, মেয়ে অভিনেত্রী হোক চান না শ্রীময়ী! মেয়ের জন্য ভিন্ন স্বপ্ন বুনছেন তিনি

অক্ষয় তৃতীয়া—হিন্দু ধর্মের এক অত্যন্ত পবিত্র তিথি। এই দিনটিকে শুভ কাজের সূচনার জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। বহু মানুষ অক্ষয় তৃতীয়াকে বেছে নেন বিয়ে, নতুন ব্যবসা, সন্তানের নামকরণ বা অন্নপ্রাশনের মত স্মরণীয় অনুষ্ঠানের জন্য। এমনই এক শুভ লগ্নে, টলিউডের জনপ্রিয় দম্পতি কাঞ্চন মল্লিক এবং শ্রীময়ী চট্টরাজ তাঁদের মেয়ের অন্নপ্রাশনের আয়োজন করে তাক লাগালেন। তবে এই অনুষ্ঠান শুধু কোনও এক ব্যক্তিগত মুহূর্তেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে তা পৌঁছে গেছে হাজারো মানুষের হৃদয়ে।

শিশুর প্রথম অন্নগ্রহণের মুহূর্ত কোনও বাবা-মায়ের কাছেই সহজ নয়। সন্তান মুখে প্রথমবার ভাত তুললে যেমন আবেগ কাজ করে, তেমনই সেই মুহূর্তকে বিশেষ করে তোলার জন্য প্রচেষ্টা থাকে সব পরিবারেরই। কাঞ্চন-শ্রীময়ীও ব্যতিক্রম নন। কিন্তু তাঁদের বেছে নেওয়া স্থান এবং অনুষ্ঠান পদ্ধতি এবার অন্যরকম বার্তা দিল। যেখানে অনেকেই বাড়িতে বা রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, সেখানেই এই দম্পতি তাঁদের মেয়ের মুখে প্রসাদ তুললেন ইসকন মন্দিরে, ঈশ্বরের সামনে, এক পবিত্র পরিবেশে।

এই বিশেষ দিনে শ্রীময়ী এবং কাঞ্চন তাঁদের মেয়ে কৃষভির অন্নপ্রাশনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন কলকাতার ইসকন মন্দির। শ্রীময়ী জানান, তাঁদের শ্বশুরবাড়িতে অন্নপ্রাশনের নির্দিষ্ট আচার না থাকায় তাঁরা ঈশ্বরের আশীর্বাদেই মুখে প্রসাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এদিন ইসকনের সেই প্রধান পুরোহিত—যিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে রাধামাধবের সেবা করে আসছেন—তিনি কৃষভির মুখে তুলেছিলেন পরমান্ন। এত বড় পবিত্রতার সঙ্গে অন্নগ্রহণ যেন ছোট্ট কৃষভির জীবনে এক অসাধারণ সূচনা।

এই অনুষ্ঠানের ছবি ও অনুভূতির কথা ভাগ করে নেন শ্রীময়ী নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি লেখেন, “কালকে আমাদের ছোট্ট কৃষভির অন্নপ্রাশন ছিল। রাধামাধবের সেবায় নিবেদিত একজন প্রধান পূজারীর হাতে মুখে পরমান্ন পেয়েছে আমাদের মেয়ে—এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।” তিনি কৃতজ্ঞতা জানান উপস্থিত সাংবাদিক, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের। এছাড়াও শ্রীময়ী জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা কৃষভিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁদের প্রতিও রইল আন্তরিক ধন্যবাদ।

আরও পড়ুনঃ সত্যজিৎ রায়ের প্রথম রঙিন ছবির নায়িকা তিনি! তাঁকে পেতে সত্যজিৎকে পোড়াতে হয়েছিল অনেক কাঠখড়! সত্যজিতের নায়িকা হওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে জুটে ছিল অপমান! অলকনন্দা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের অজানা গল্প জানলে শিহরিত হবেন

এই বিশেষ দিনে শ্রীময়ী ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যেন তাঁদের কন্যা মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠে। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানান, তিনি চান না তাঁর মেয়ে ভবিষ্যতে অভিনেত্রী হোক। এই পেশার অনিশ্চয়তার কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত তাঁদের। যেখানে বাবা কাঞ্চন মল্লিক একাধিক দশক ধরে অভিনয় করছেন, মা শ্রীময়ী নিজেও ছোটপর্দার পরিচিত মুখ—তবুও মেয়ের জন্য তাঁরা চেয়েছেন এক স্বচ্ছল, স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ। অন্নপ্রাশনের দিন কৃষভি পড়েছিল লাল বেনারসি, মাথায় সোনালি মুকুট, গলায় একাধিক হার, এবং মেনুতে ছিল লুচি থেকে পায়েস, পাঁচতরকারি থেকে এঁচোড়ের তরকারি—সব মিলিয়ে একেবারে বাঙালি রীতি মেনে, আবেগে-ভক্তিতে মোড়া এক অসাধারণ দিন কাটিয়েছে মল্লিক পরিবার।