নাম তাঁর সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) ! বাঙালির কাছে এই নামটাই তাঁর পরিচয় জন্য যথেষ্ট। একাধারে চিত্রপরিচালক, লেখক, অঙ্কন শিল্পী, ও নানান প্রতিভার ভান্ডার ছিলেন তিনি। তাঁর অসামান্য কাজগুলির মধ্যে ‘অপুর ট্রিলজি’ (The Apu Trilogy) এবং ‘চারুলতা’ (Charulata) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাদাকালো ছবিতেও তার অসাধারণ মন্তাজ ও আলোর ব্যবহার সকল দর্শকের নজর কেড়েছিল। বাংলা চলচ্চিত্রে ধীরে ধীরে রঙিন ছবি প্রবর্তন করতে শুরু করলে, সত্যজিৎ রায় সিদ্ধান্ত নেয় একটি রঙিন ছবি করার।
এতদিন অন্য সাহিত্যিকদের গল্পের উপর ভিত্তি করে ছবি বানাতেন তিনি, কিন্তু এই রঙিন ছবির জন্য নিজেই গল্প লেখেন, ছবির নাম দেওয়া হয় ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ (Kanchenjunga)। বরাবরের মতো একই অভিনেতা অভিনেত্রীদের বাইরে তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন এই ছবিতে। প্রসঙ্গত যেকোনো ছবির জন্য আগেভাগেই চরিত্রদের স্কেচ তৈরি করতেন সত্যজিৎ রায়। সেই স্কেচের ওপর ভিত্তি করে একই রকম দেখতে মানুষ খুঁজে আনার দায়িত্ব ছিল কিছু বন্ধুর উপর। সেই ভাবেই একদিন এই ছবির নায়িকা খুঁজতে গিয়ে চোখে পড়ে এক তরুণীকে, ‘অলকনন্দা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Alaknanda Roy) ।
এক নজরেই তাকে পছন্দ হয়ে যায় পরিচালকের। তখনও ১৮ পার করেননি অলকনন্দা আর পরিবারও ছিল ভীষণ রক্ষণশীল। বড় জ্যাঠা মারা গিয়েছিলেন ফলে মেজো জ্যাঠার দেখার কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে তাঁর বাবা কোনও সিদ্ধান্ত নিতেন না। সত্যজিৎ রায় তাঁদের বাড়ি গিয়ে সবাইকে অনেক বুঝিয়ে তবে রাজি করান অলকনন্দাকে যাতে অভিনেত্রী হতে দেন। প্রাথমিকভাবে তাঁর পরিবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিলেন, পরে কিছু শর্ত আরোপ করে সত্যজিৎ রায়ের উপর তাঁরা সিদ্ধান্ত বদল করেন। শর্ত রাখা হয় এরপর আর কোনও ছবিতে তাঁকে অভিনেত্রী হিসেবে ডাকা যাবে না,
এমনকি কাউকে ফোন নম্বর দেওয়া যাবে না, কোনও ম্যাগাজিনে ছবি ছাপা যাবে না, আর রাতের অনুষ্ঠানেও ডাকা যাবে না। সব শর্ত মেনে নিয়ে অলকনন্দা হয়ে ওঠেন কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবির মনীষা। অভিনেত্রী বলেন অভিনয় জগতে আসার তাঁর কোনও ইচ্ছে ছিল না, ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা হতে চেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে বিয়ে এবং এমএ পাস করেছেন বিদেশে যাওয়ার স্কলারশিপও পেয়েছিলেন কিন্তু পারিবারিক কারণে যেতে পারেনি। ন্যাশনাল লাইব্রেরী থেকে তথ্য নিয়ে রিসার্চ পেপারও তৈরি করেছেন।
অভিনেত্রী পড়াশোনায় তুখোর দেখে সত্যজিৎ রায় তাঁকে স্ক্রিপ্ট পড়তে দেননি, পাছে মুখস্ত করে বলে ফেলেন বরং তার বাড়ি এসে স্ক্রিপ্ট রিডিং করে শুনিয়ে দিয়ে গেছিলেন চরিত্রের গঠন। অভিনেত্রীর কথায় উঠে আসে তাকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় এবং স্ত্রী বিজয়া রায়ের যত্নের কথা। অভিনেত্রী বলেন, “একেই আমি তরুণী তারপর সত্যজিৎ রায়ের ছবি সেই জন্য নিজে হাতে দর্জির দোকানে গিয়ে জামা কাপড়ের রং বেছে এসেছিলেন তিনি। মাকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছিলেন চৌরঙ্গীতে একটি দর্জির দোকানে গিয়ে আমার মাপ দিয়ে আসতে। বোম্বেতে তখন রঙিন ছবি রঙের মেলায় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার অবস্থা,
কিন্তু এই ছবির রং এর মধ্যে রয়েছে এক আলাদাই স্নিগ্ধতা।” অভিনেত্রী আরো জানান তাঁর চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছবির চরিত্রকেও ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অবশেষে ১৯৬২ সালে মুক্তি পায় ছবিটি সেই সময় ততটা নাম না করতে পারলেও প্রায় ৩০ বছর পর দূরদর্শনের প্রচারের মাধ্যমে কাল ক্লাসিকে পরিণত হয়। এত রকম শর্তের জন্যই হয়তো সত্যজিৎ আর কখনো অলকনন্দাকে ডাকেননি। সেই নিয়ে অবশ্য অভিনেত্রীর আক্ষেপ নেই। তবে ছবির মুক্তির পরের বছরেই বিয়ে হয়ে যায় আরেক রক্ষণশীল পরিবারে, যেখানে সত্যজিতের নায়িকা হওয়ার কারণে তাকে অনেক অপমান সইতে হয়।
আরও পড়ুনঃ চলতি বছরের শুরুতেই বিচ্ছেদ ঘিরে ঝড় তুলেছিলেন সমাজ মাধ্যমে! এবার সুদীপের সঙ্গে বিচ্ছেদের একমাস পেরোতেই চরম সিদ্ধান্ত নিলেন পৃথা!
শ্বশুরবাড়ির লোক কারোর কাছে অভিনেত্রীর পরিচয় দিতেন না অপমান বোধ করতেন পাছে কেউ বলেন পুত্রবধূর টাকায় সংসার চলে। এরপরে আর অভিনয় জগতে আসার কথা ভাবেননি তবে সংসার সামনে একটি ইংরেজি পত্রিকার এডিটরের কাজ করতে। সেই সময় বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চোখে পড়েন তিনি। বুদ্ধদেব বাবু অভিনেত্রী কে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু অভিনেত্রী সোজা জানিয়ে দেন প্রথমেই তিনি সত্যজিতের নায়িকা হয়েছেন, এরপর আর কোনও ছবিতে কাজ করতে চান না। কিন্তু বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত তাকে নিজের ছবির প্রধান নায়িকা করার প্রস্তাব দেন। ছবির নাম ‘ফেরা’ আর সেই ফেরা দিয়েই বহু যুগ পর্দায় প্রত্যাবর্তন হয় অভিনেত্রীর।
“আগের বছরের মতো গরম নেই, পরের বছর নির্বাচনের সময় দেখবেন কেমন গরমটা পড়ে!” ‘গরম নিয়ে মাথা খারাপ, রাস্তায় নেমে আর কবে জনস্বার্থে কাজ করবেন?’ রচনার মন্তব্যে কটাক্ষ নেট পাড়ার