একসময় জি বাংলার জনপ্রিয় রান্নার অনুষ্ঠান ‘রান্নাঘর’ (Zee Bangla Rannaghor) -এর নাম শুনলেই দর্শকের মনে ভেসে উঠত একটাই মুখ—‘সুদীপা চ্যাটার্জি’ (Sudipa Chatterjee)। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিনি শুধু এক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নন, হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির রান্নাঘরের আত্মা। অথচ একদিন হঠাৎ করেই সব শেষ। যে চ্যানেল তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে, সেই চ্যানেলই তাকে ছেঁটে ফেলে। আজ নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘সুদীপার সংসার’–এর মাধ্যমে আবার রান্না শেখাচ্ছেন দর্শকদের, তবে সেই অতীতের ক্ষত এখনও ভুলতে পারেননি।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সুদীপা অকপটে জানিয়েছেন, রান্নাঘর থেকে বাদ পড়ার পর তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, সেটা কেউ পরিষ্কার বলেনি। সেই সময় তিনি বাংলাদেশে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে এক রেসিপি শো-তে গিয়েছিলেন, যেখানে গরুর মাংস রান্না হচ্ছিল। দেশের বৈচিত্র্য ও অন্য সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখেই তিনি কোনও বিরোধিতা না করে প্রশংসা করেছিলেন সেই রান্নার। কিন্তু দেশে ফিরে তার জেরে তাঁকে ট্রোল করা শুরু হয়। সুদীপা মনে করেন, সেই বিতর্কই তাঁর ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা দেয়।
তিনি বলেন, “আমাকে জানানো হয় সেদিন কুরবানী ঈদ, জাতীয় খাবার গরুর মাংস হওয়ায় ওটাই রান্না করা হবে। আমি ভেবে দেখলাম অন্য দেশে যদি থাকতাম সেখানে অন্যরকম খাবার রান্না হতো, তখন তো আমি না করতে পারতাম না। এবার একজন রান্না করছে, আমি তার নিন্দা না করে তাই প্রশংসাই করেছি। আমি পুজোআচ্ছা করি, প্রচন্ড আধ্যাত্মিক কিন্তু ধর্মীয় উন্মাদনায় বিশ্বাস করি না! ভারতের বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য, এমন একটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি বলে গরুর মাংস রান্না হচ্ছে সেটাকে নিয়ে মাথা ঘামাইনি।”
তবে শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, সুদীপার দাবি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছিল। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার হাওয়া তৈরি করা হয়েছিল টাকার বিনিময়ে। দীর্ঘ ১৭ বছর প্রাণপাত করে কাজ করার পরেও তাঁকে শুধু ‘একঘেয়েমির’ অজুহাতে অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই যন্ত্রণাই আজও বয়ে চলেছেন তিনি। তাঁর মতে, তাঁর জনপ্রিয়তা যেন চ্যানেলের পছন্দ ছিল না, বরং তাঁকে অদৃশ্য করার পরিকল্পনাই ছিল প্রযোজকদের মনে।
সুদীপা আরও অকপটে বলেন, তিনি টাকা ভালোবাসেন, কারণ সেটাই তাঁর জীবনের নিরাপত্তা। জি বাংলার মতো প্ল্যাটফর্ম তাঁকে সেই আর্থিক স্বচ্ছলতা দিয়েছিল। কিন্তু সেই শেষের দিকে তাঁকে এমনভাবে সঞ্চালনা করতে বাধ্য করা হচ্ছিল যেন তাঁর উপস্থিতির গুরুত্বই না থাকে। সুদীপার কথায়, “আজকে আমাকে মানুষ চেনে রান্নাঘরের দৌলতেই। ওরাই আমাকে তৈরি করেছে। আমার বলতে কোনও লজ্জা নেই, আমি টাকাকে ভীষণ ভালোবাসি, টাকা ছাড়া চলতে পারি না। আমাকে খুব পরিচিত মানুষও পুজোর উদ্বোধনে ডাকলে ন্যূনতম পারিশ্রমিক ছাড়া আমি যাই না।
আরও পড়ুনঃ বৃষ্টি ভেজা রাতে একসঙ্গে রিসোর্টে স্বতন্ত্র-কমলিনী! আদালতের মামলা ভুলে আনন্দে আত্মহারা কমলিনী! একদিকে প্রেম, অন্যদিকে সমাজ! একসঙ্গে কাটানো রাত কি উলটে দেবে মামলার রায়?
জি বাংলা আমার এই অভ্যাসটাকে বদ অভ্যাসে পরিণত করে দিয়েছিল একটা বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে।” এমনকি শেষের দিকে অনুষ্ঠানের পরিচালকের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতির মত ঘটনাও ঘটে। সুদীপা বলেন, “মেরে মুখ ফাটিয়ে দেবো বলেছিলাম তাঁকে।” শেষপর্যন্ত তাঁকে একরকম অপমানিত করেই সরিয়ে দেওয়া হয়, কারণ তাঁর ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তা চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। এইসব অভিজ্ঞতা আজ সুদীপাকে ভীষণ তিক্ত করেছে, কিন্তু তিনি হার না মেনে– নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রান্না শেখাচ্ছেন, শাড়ির ব্যবসা করছেন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।