একজন মায়ের জীবনে তার সন্তানের জন্য ঠিক কতটা ত্যাগ স্বীকার থাকে, তা হয়তো কখনও সঠিকভাবে মাপা যায় না। সন্তানকে হাসিমুখে মানুষ করতে গিয়ে কত নারীই যে নিজের স্বপ্নগুলো বিসর্জন দেন, তার কোনও হিসেব থাকে না। ক্যামেরার আলো-ঝলমলে দুনিয়া থেকে হঠাৎ বিদায় নেওয়া এক অভিনেত্রীর গল্প আমাদের চোখে এনে দেয় বাস্তব জীবনের কঠিন অধ্যায়, যেখানে লাইট-ক্যামেরার বাইরেও একজন মা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চুপিচুপি।
ছোটপর্দার দাপুটে অভিনেত্রী স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়ের জীবন একসময় ঘুরপাক খেত সেটের আলো, সংলাপ আর চরিত্র নিয়ে। কিন্তু এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজ এক অন্য পরিচয়ে পরিচিত — একজন মা, একজন উদ্যোক্তা, একজন সংগ্রামী নারী। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরেছে তখনই, যখন মাতৃত্বের ভূমিকা নিতে হয়েছে তাঁকে। আর সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা মূল্যবান ও কষ্টকর, তা ধীরে ধীরে সামনে আনলেন স্বরলিপি।
‘অগ্নিপরীক্ষা’র দোয়েল চরিত্রে জনপ্রিয়তা পাওয়া স্বরলিপি একসময় টেলিভিশনের পর্দা কাঁপিয়েছেন। কিন্তু মেয়ের মানসিক সমস্যার সূত্র ধরে হায়দরাবাদে তাঁর তৈরি ক্যাফে ছেড়ে ফের কলকাতায় ফিরে আসতে হয় তাঁকে। স্বরলিপি জানান, যখন মেয়েটি বলেছিল, “আমি আকাশের তারা হয়ে যেতে চাই”, তখন তিনি বুঝেছিলেন, কেমন ভয়ঙ্কর মানসিক ধাক্কায় রয়েছে তাঁর সন্তান। সেই সময়েই ব্যবসায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার ঋণের দায়ে পড়েন তিনি। অথচ সন্তানকে একা রেখে কাজ করতে না পারার যন্ত্রণা তাঁকে ক্রমশ ছেঁকে ধরছিল।
তিনি বলেন, “মেয়েকে দুধ খাওয়াচ্ছি, ওদিকে ফোনে কাজের চাপ। আমি ছুটে যাচ্ছি, আবার ফিরে আসছি। শরীরের হরমোনাল সমস্যা, মানসিক চাপ— সব মিলিয়ে অসহ্য একটা সময় ছিল সেটা।” সেই সময়ই অনুভব করেন, শুধুমাত্র মা হওয়াই যথেষ্ট নয়, সেই ভূমিকার প্রতিটি ধাপে নতুন করে নিজেকে শিখিয়ে যেতে হয়। মেয়ের বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেও প্রতিদিন শিখে চলেছেন মা হিসেবে আরও ভালোভাবে কীভাবে পাশে থাকা যায়।
আরও পড়ুনঃ নতুনকে কমলিনীর সংসারে ফিরিয়ে আনার ফাঁদ পাতলো মিটিল! শত অশান্তির মধ্যেও বিয়ে লাগতে চলেছে বাড়িতে! তবে, কী আবারও আনন্দে ভরে উঠবে কমলিনী-স্বতন্ত্রর জীবন?
এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। মেয়েটি ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে মায়ের চাওয়া-পাওয়া, ভালোবাসা, কাজের চাপ। স্বরলিপি বলেন, “আজ আমি বললে ও শুনে নেয়— ঘুমোতে দে প্লিজ, প্রচুর কাজ করেছি। আগে বুঝত না, এখন বোঝে।” মাতৃত্বের এই চলমান অধ্যায় নিয়ে স্বরলিপির উপলব্ধি, “মেয়েটা বড় হয়ে যাবে, তখন সমস্যা থাকবে— তবে রকমটা বদলে যাবে।” কোটি টাকার ঋণ, করোনা পরিস্থিতি, নিজের শরীরের সঙ্গে লড়াই— সব কিছু সামলেও তিনি আজ নতুন করে লড়াই করছেন কন্যার মুখে হাসি দেখার জন্য। এই গল্প শুধু একজন অভিনেত্রীর নয়, এ হল এক সাহসী মায়ের জয়যাত্রার কাহিনি।