“আমি কিছু জানি না, চরিত্র ভালো তাই করেছি!”— এই অজুহাতে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ বিতর্কে পিছিয়ে গেলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পাশে দাঁড়ালেন না নিজের সম্প্রদায়ের! এবার ‘হোক কলরব’-এও কি একই অজুহাত দেবেন তিনি? জাতির আন্দোলনকে হেয় করে, ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে পারবেন তিনি? নাকি রাজনৈতিক দলের জন্য পিঠ বাঁচাবেন?

আর হাতে গোনা কয়েক দিনের মধ্যে মুক্তি পেতে চলা ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ (The Bengal Files) নিয়ে এখনও উত্তাল বাংলার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিসর। ছবির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইতিহাস বিকৃত করে এক বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা হয়েছে। গোপাল পাঁঠার মতো বিতর্কিত চরিত্রকে নাকি অসম্মান করা হয়েছে। এই ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee)। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, অভিনেতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— তিনি ইতিহাসবিদ নন, কেবল চরিত্র আকর্ষণীয় বলে অভিনয় করেছেন। তাই তথ্য বিকৃত হলেও হতে পারে, সেটা তাঁর জানার বিষয় নয়!

সমালোচকদের মতে, এটা নিছক দায় এড়ানোর অজুহাত। কারণ একজন শিল্পীর দায়িত্ব কেবল চরিত্রে প্রাণ দেওয়া নয়, বিশেষ করে যখন সেই চরিত্র ইতিহাসের সঙ্গে, একটি জাতির অস্তিত্ব ও যন্ত্রণার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। অন্যদিকে, শাশ্বতের বক্তব্য অনেকের কাছে ভণ্ডামি বলেই মনে হয়েছে। কেননা, যে ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন সেটি সরাসরি তাঁর নিজের সম্প্রদায়কে ঘিরে তৈরি, সেখানে ইতিহাস বিকৃতি হলে তিনি কি সত্যিই অজানা থাকতে পারেন? রাজনৈতিক চাপ থাকুক বা পেশাগত অসুবিধা, একজন শিল্পীর কাছ থেকে এমন নির্লিপ্ত অবস্থান মোটেই কাম্য নয়।

Tollywood, actor, Bollywood, Saswata Chatterjee, বিনোদন, বাংলা সিনেমা, entertainment

তাঁর এই অবস্থান সমাজে দায়বদ্ধতার অভাবকেই স্পষ্ট করে। একজন সচেতন শিল্পীর কাছ থেকে দর্শকরা আশা করেন, তিনি অন্তত ইতিহাস বিকৃতিকে সমর্থন করবেন না, নিজের চরিত্র নিয়ে বা ছবির গল্প নিয়ে আগে পড়াশোনা করে তবেই রাজি হবেন কাজ করতে! এমন অবস্থাতেই শাশ্বতের পরবর্তী প্রজেক্ট নিয়ে আবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘হোক কলরব’-এ তাঁকে দেখা যাবে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। ছবির অনুপ্রেরণা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃ’ত্যু এবং ছাত্র আন্দোলন। এই ঘটনাই একসময় গোটা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিল।

ছবিটি আন্দোলনের আবেগ, ক্ষোভ এবং প্রতিবাদকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলবে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে রাজনৈতিক প্রসঙ্গও আসবে। তাই প্রশ্ন উঠছে— এবারও কি শাশ্বত বলবেন, তিনি কিছু জানতেন না? হয়তো অনৈতিক আন্দোলন ছিল, আগে জানলে করতাম না? সেই ক্ষেত্রে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এর মতো ইতিহাসনির্ভর ছবির ক্ষেত্রে দায় এড়ানো হয়তো অভিনেতার পক্ষে সহজ ছিল। কিন্তু যাদবপুরের আন্দোলনের মতো সাম্প্রতিক ও বাস্তব ঘটনার ছবিতে তিনি কীভাবে নিরপেক্ষ থাকবেন?

আরও পড়ুনঃ ‘ডান্স বাংলা ডান্স ২০২৫’–এর ‘চ্যাম্পিয়নস’ রিজু–রাজু ও কৃত্তিকা! ‘রাম সিয়া রাম’ গানে অনবদ্য পরিবেশনা! সেরা খেতাব ছিনিয়ে নিল আদিত্য, পেল সর্বোচ্চ বিজয়ীর মুকুট!

যদি ছবির প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের প্রতিবাদ, রাজনীতি বা প্রশাসনের ব্যর্থতা উঠে আসে, তখনও কি তিনি বলবেন, “আমি শুধু অভিনয় করেছি, জানতাম না?” যদি তাই হয়, তবে সেটা নিছক শিল্পের প্রতি দায়সারাভাব ছাড়া কিছুই নয়। বরং এটা প্রমাণ করবে যে তিনি নিজেই নিজের চরিত্রকে বোঝার জন্য ন্যূনতম সচেতন প্রচেষ্টা করেননি। সব মিলিয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক অবস্থান তাঁর ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে। একজন প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় অভিনেতা যদি একটি জাতির আন্দোলনকে উপেক্ষা করেন, তিনি কীভাবে একটি ছাত্র আন্দোলনের চরিত্রে নিজেকে সৎভাবে উপস্থাপন করবেন?