‘চ্যাঙমুড়ি কানী’ মনসার চরিত্রে ঘষা লেন্সে চোখ ঢাকতেন! জ্যান্ত সাপ নিয়ে পর্দায় ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি! বাঙালির জীবন্ত মনসা সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠার গল্প জানেন? জানলে চমকে যাবেন আপনিও!

এক দেবী, যাঁর পুজোর পেছনে জড়িয়ে আছে অসম্মান আর উপেক্ষার দীর্ঘ ইতিহাস। সমাজে স্বীকৃতি পেতে দেবী মনসাকে (Devi Manasa) যেভাবে লড়তে হয়েছে, সেই বঞ্চনার কাহিনি নিয়েই রচিত হয় মনসামঙ্গল কাব্য। মনসা দেবীর আর এক নাম ‘চ্যাঙমুড়ি কানী’ আর রূপোলি পর্দায় এই চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে একমাত্র সক্ষম হয়েছিলেন ‘সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়’ (Subrata Chatterjee) । তাঁর অনবদ্য অভিনয়ে মা মনসা হয়ে ওঠেন রক্তমাংসের দেবী, যিনি ভয়ের নয়, বরং সহানুভূতির দাবি রাখেন। বাংলার বহু অভিনেত্রী দুর্গা রূপে পরিচিতি পেলেও, মনসা রূপে যে অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন, তা কেবলই সুব্রতার কৃতিত্ব।

বাংলা চলচ্চিত্রে ১৯৭৭ সাল ছিল ঐতিহাসিক বছর। সাপকে কেন্দ্র করে বাংলায় একসঙ্গে মুক্তি পায় দুটি সুপারহিট রঙিন ছবি—‘বাবা তারকনাথ’ এবং ‘বেহুলা লখিন্দর’। এই দুই ছবিতেই ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। একটি ছবিতে মনসার চরিত্রে অভিনয় করেন সুব্রতা, আর অন্যটিতে বেহুলার ভূমিকায় ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। দুজনেই তাঁদের অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন। তবে যেভাবে মনসার চরিত্রে সুব্রতার সংবেদনশীল অভিনয়ে দেবীর যন্ত্রণাকে ফুটিয়ে তোলেন

সেটাই তাঁকে আলাদা করে দেয়। তিনি এই চরিত্রে ‘ভিলেন’ হননি, বরং একজন উপেক্ষিত নারীর আখ্যান তুলে ধরেন। মনসার চরিত্রে এক চোখ অন্ধ দেখাতে গিয়ে সুব্রতা চট্টোপাধ্যায় যে রকম সাহস দেখিয়েছিলেন, তা আজও স্মরণীয়। সেই সময় ভারতে কনট্যাক্ট লেন্সের সুবিধা ছিল না। সুব্রতা নিজের চোখে ‘ঘষা লেন্স’ পরেছিলেন, শুধুমাত্র বাস্তবতাকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে। এই চরিত্রের জন্য তাঁর সাজ, অভিব্যক্তি এবং অভিনয়ের দাপট, সব মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন রূপালী পর্দার আইকন।

তাঁর কন্যা ঝিমলি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সেই সময়ে প্রস্থেটিক মেকআপ না থাকায় এই ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। আর সেই সাহসিকতাই সুব্রতাকে কিংবদন্তি করে তোলে। এই দুই ছবির অন্যতম আকর্ষণ ছিল সত্যিকারের সাপ ব্যবহার। খ্যাতনামা সর্পবিশেষজ্ঞ দীপক মিত্র প্রশিক্ষিত সাপ নিয়ে কাজ করেছিলেন এই ছবিতে। যদিও দেবী মনসার চরিত্রে অভিনয় করছিলেন সুব্রতা, তবু জ্যান্ত সাপের সামনে অভিনয় করতে তাঁর বেশ ভয় হয়েছিল। প্রযোজক দীনেশবাবু তাঁকে সাহস দেন, সেই সাহসই তাঁকে পৌঁছে দেয় ইতিহাসের পাতায়।

আরও পড়ুনঃ “বাংলা আমার সাহসিকতার দাম দেয়নি”, সাহস দেখিয়েও আমি স্ট্রাগলার!”— অভিনয়ে পঞ্চাশ পার, তবু বলিউডে শুরু শূন্য থেকে! টলিউডে বঞ্চনার পর বলিউডে ঠাঁই খুঁজছেন অভিনেত্রী নন্দিনী চট্টোপাধ্যায়!

যদিও এর আগে বেশ কয়েকবার মনসা দেবীর আখ্যান, বেহুলার গল্প নিয়ে ছবি ও নাটক হয়েছে কিন্তু কোনওটাই তেমনভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি, বা অভিনয় তেমন দাগ কাটতে পারেনি দর্শকমনে। আজও মনসা পুজো এলেই মানুষ সেই ‘মনসা’র কথা মনে করেন যিনি দেবী হয়ে উঠেছিলেন রক্তমাংসের শরীর ছুঁয়ে—সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়। বাংলার সংস্কৃতিতে দেবী মানে যে শুধুই পৌরাণিক ভাবনা নয়, তা বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তাঁর মনসা রয়ে যাবে ইতিহাসে, আবেগে, আর বাংলার চিরকালীন বিশ্বাসে।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।