Paran Bandopadhyay: জন্মের পরেই মা-বাবাকে হারান, সংসার চালাতে স্ত্রীর গয়না রেখেছেন বন্ধক! জানুন আইকনিক হিরো পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কষ্টের কাহিনী
তিনি বাংলার আইকনিক অভিনেতা। যেকোনও চরিত্রই অসামান্য তিনি। সেই চরিত্র যতই স্বল্প হোক না কেন নিজের তীব্র অভিনয় দক্ষতায় তিনি দর্শকদের মন জিতে নেবেনই। তাঁর প্রত্যেকটা চরিত্রে আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা, কৌতুক মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে বাংলার বর্ষীয়ান অভিনেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সিনেমা-সিরিয়ালের অন্যতম আইকনিক এক চরিত্র। নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে আজও সমানতালে বাঙালির মনোরঞ্জন করে চলেছেন তিনি।
এই অভিনেতার অভিনয় ভীষন ভাবে জীবন্ত।প্রত্যেকটি চরিত্র রক্তমাংসে গড়া। তাঁর নিখুঁত অভিনয় দেখে সত্যি সত্যিই পরাণ জুড়িয়ে যায় বাঙালি দর্শকদের। বয়স আশির কোটা পেরোলেও আজও তিনি এভারগ্রীণ। এই বয়সেও সমানতালে নবীন অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে দাপিয়ে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। কতশত যে তাঁর ভালো ছবি তা গুনে শেষ করা যাবে না।
তবে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার জীবনটা কিন্তু বেশ কষ্টের। ভীষণ ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। জন্মের ৫ মাসের মাথাতেই মাতৃহারা হন এই অভিনেতা। ছোট্ট পরাণকে তখন নিজের বুকে আঁকড়ে নেন অভিনেতার পিসিমা কমলা দেবী। নিজের পিসির স্ত’ন্য’পা’ন করেই বড় হয়েছেন অভিনেতা। তাঁর কাছে তাঁর পিসিই ছিলেন তাঁর মা। পিসির দমদমের বাড়িতেই বড় হয়ে ওঠা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
অভিনেতার পিসতুতো দাদা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর পিতৃসম। সমস্ত আদর-আবদারের একমাত্র কেন্দ্রস্থল। আসলে অভিনেতার বাবাও ছিলেন ভবঘুরে। আর তাই জন্মের পরেই মা চলে গেলেও সেই অর্থে বাবার টান অনুভব করেননি অভিনেতা। যদিও মাঝেমধ্যে গ্রাম থেকে এসে পরাণের সঙ্গে দেখা করে যেতেন তার বাবা।
তবে আশ্চর্যের বিষয় নিজের বাবাকে কখনও বাবা বলে সম্বোধন করেননি অভিনেতা। ডাকতেন কাকা বলে। বাবার সম্পর্কে এতটাই নিরুত্তাপ ছিলেন অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েও তাই গ্রামে না গিয়ে কলকাতাতেই পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।
খুব ছোট থেকেই আর্থিক কষ্ট টানাটানি দেখেছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই অল্প বয়স থেকেই রোজগারের টান অনুভব করেন। থিয়েটারে যখনই যা কাজ পেতেন সেটাই করতেন। সেইখান থেকে প্রাপ্ত টাকাই ছিল তাঁর সম্বল। পরে অবশ্য একটি সরকারি চাকরি কোনমতে জুটিয়েছিলেন। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি টান চাকরির ক্ষেত্রে বারবার ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিল। থিয়েটারি সম্পূর্ণ ভাবে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না অভিনেতা।
পরবর্তীতে নিজের ভালোবাসার নারীকে বিয়ে করায় পরিবারের থেকে দূরত্ব বেরেছিল অভিনেতার। তাঁর স্ত্রী একটি জুনিয়র স্কুলে চাকরি করতেন। সেখান থেকে যেটুকু টাকা আয় হত সেটা দিয়েই টেনেটুনে চলতে সংসার। জানা যায় অবস্থা এতটাই সঙ্গীন হয়ে পড়েছিল যে স্ত্রীর গয়নাও বেচে দিতে হয় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বলা যায় একটু বয়স কালেই অভিনয়ের ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালক সন্দীপ রায়ের জুহুরির চোখ চিনে নিয়েছিল তাঁকে। সন্দীপ রায় তাকে টেলিভিশনের জন্য করা ‘সাধন বাবুর সন্দেহ’তে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ দেন। তারপর থেকেই সাফল্য অভিনেতার দরজায় টোকা নেড়েছে। আজ একাধিক সিরিয়াল সিনেমায় সফলভাবে অভিনয় করেছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন বেশ কিছু বাংলা সিনেমা রয়েছে যেগুলি শুধুমাত্র তাঁকে ভেবেই লেখা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার স্পর্ধা হয়ত কোনদিন কেউ দেখাতে পারবেনা। তার মতো গুণী অভিনেতার অভিনয় দেখতে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।