৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের জন্য হাতে আর মাত্র চার দিন। অথচ এ বছর উৎসব ঘিরে টলিপাড়ার সঙ্গে শাসকদলের দূরত্বের জেরে বিতর্ক চরমে। টলিউডের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এই উৎসব এখন আর শিল্পীদের অংশগ্রহণমূলক সাংস্কৃতিক মঞ্চ নয়, বরং শাসকদলের একচেটিয়া প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। নন্দন চত্বরে প্রস্তুতির অভাব এবং আমন্ত্রণপত্র বিলিতে দেরি, এই অভিযোগ আরও জোরালো করেছে। ফলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, উৎসবের সার্বিক মান এবং চাকচিক্যে বড় প্রভাব পড়তে পারে।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব বয়কটের সিদ্ধান্ত?
টলিপাড়ার শিল্পীরা অভিযোগ করছেন, আরজি কর-কাণ্ডে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাদের প্রতিবাদকে শাসকদল ভালোভাবে নেয়নি। সরকারের সঙ্গে এই মতবিরোধের ফলস্বরূপ, টলিউডের অধিকাংশ পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতা উৎসব বয়কট করেছেন বলে গুঞ্জন। শিল্পী এবং পরিচালকদের মতে, শাসকদলের সঙ্গে এই সংঘাতের প্রভাব উৎসবের আয়োজনে স্পষ্ট। এত বড় একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টের প্রাক্কালে টলিউডের শিল্পীদের অনুপস্থিতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
উৎসবের নেতৃত্বে এই বছর বড় পরিবর্তন ঘটেছে। গত কয়েক বছর উৎসবের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তবে এ বার তাঁর জায়গায় এসেছেন গৌতম ঘোষ। তবে এই রদবদল নিয়েও শিল্পীমহলে অসন্তোষ রয়েছে। ফেডারেশন বনাম পরিচালকদের দ্বন্দ্ব এবং শাসকদলের সঙ্গে টলিপাড়ার সংঘাতের জেরে অনেকেই মনে করছেন, নতুন নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে উৎসবের পরিকল্পনা এবং সুষ্ঠু পরিচালনায় বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে।
এত বড় একটি ইভেন্টে বলিউড তারকাদের অনুপস্থিতিও উৎসবের গ্ল্যামারে প্রভাব ফেলেছে। গত বছর মনোজ বাজপেয়ী এবং সৌরভ শুক্লের মতো তারকারা উপস্থিত থাকলেও এ বছর বলিউডের কোনও বড় তারকা আসছেন না বলে জানা গেছে। যদিও বর্ষীয়ান গীতিকার গুলজার সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা দিতে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে, কিন্তু এই সীমিত উপস্থিতি উৎসবের চিরাচরিত জাঁকজমকের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: নস্টালজিয়া উস্কিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর পর ফের একসঙ্গে ‘রাখি বন্ধন’ জুটি কৃতিকা-সোহম! কোন ধারাবাহীকে ফিরছে পর্দার ভাই-বোন?
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মতো আন্তর্জাতিক ইভেন্টের জন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কিন্তু শাসকদলের সঙ্গে টলিপাড়ার দূরত্ব এবং প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব এই উৎসবের সার্বিক সাফল্যকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। সিনেমাপ্রেমীরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব তার ঐতিহ্য এবং গুণগত মান হারাতে পারে। উৎসবের ভবিষ্যৎ নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু হলেও পরিস্থিতির কোনও ইতিবাচক সমাধান এখনও পর্যন্ত চোখে পড়ছে না।