বাংলা বিনোদন জগতের এক সময়ের খুব চেনা মুখ ছিলেন অভিনেত্রী ‘সুচেতা চক্রবর্তী’ (Sucheta Chakraborty)। পর্দায় তাঁকে কখনও মমতাময়ী মা হিসেবে দেখা গিয়েছে, আবার কখনও কঠোর শাশুড়ির চরিত্রে। সহজ-সরল অভিনয় আর অনবদ্য সংলাপ বলার ক্ষমতায় দর্শকের মনে তিনি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর চরিত্রগুলো হয়তো প্রধান ছিল না, কিন্তু সেই চরিত্রগুলো ছাড়াও গল্প যেন অসম্পূর্ণ থেকে যেত। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পীও ছিলেন।
দর্শকদের কাছে তাই সুচেতা ছিলেন একেবারে আপনজনের মতো। বড়পর্দায় তাঁর সফল ছবির তালিকায় রয়েছে– ‘দেবা’, ‘দিওয়ানা’, ‘একটু ভালোবাসার জন্য।’ সম্ভবত, দিওয়ানা ছবিটিই ওনার শেষ কাজ। এছাড়াও তাঁর অভিনয় জীবনে অনেক ধারাবাহিকই সাফল্যের অংশ হয়েছে। ‘আঁচল’, ‘সৌভাগ্যবতী’, ‘বেনেবউ’ কিংবা ‘জয়া’— প্রতিটি ধারাবাহিকের চরিত্রেই তিনি নিজের আলাদা ছাপ রেখে গেছেন। বিশেষ করে ‘আঁচল’ ধারাবাহিকেই তিনি সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।
এই ধারাবাহিকের মধ্য দিয়েই তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। ক্যামেরার সামনে তিনি যতটা প্রাণবন্ত ছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনে ততটাই লড়াকু ছিলেন সুচেতা। এত সাফল্যের মাঝেই যেন অন্ধকার ঘিরে ধরে সুচেতাকে।অভিনেত্রীর জীবনে আসে এক কঠিন সময়, হঠাৎ জানা যায় তিনি ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত। সাধারণ মানুষ হয়তো ভেঙে পড়তেন, কিন্তু সুচেতা ছিলেন ভিন্ন ধাঁচের। চিকিৎসার পাশাপাশি অভিনয় চালিয়ে গেছেন সমানতালে।
শারীরিক যন্ত্রণা সামলেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই জেদ এবং অদম্য মানসিক শক্তিই অনুপ্রেরণা হয়ে আছে আজও। তবে লড়াই যতই করুন, শেষ রক্ষা কিন্তু হয়নি। ২০১৮ সালের ১৬ আগষ্ট, অকালেই চলে যান অভিনেত্রী সুচেতা চক্রবর্তী। খবরটা পাওয়ার পর বিশ্বাসই করতে পারেননি তাঁর সহকর্মীরা এবং অনুরাগীরা। সকলে ভেবেছিলেন, তিনি লড়াই করে ফিরবেন আগের মতো, কিন্তু ভাগ্য তা হতে দিল না।
আরও পড়ুনঃ “জয় আমার জীবনের প্রথম পুরুষ…ওই পারে থাকব আমি, তুমি রইবে এই পারে!” “জয়ের মা ছেলেকে চন্দন পড়া অবস্থায় দেখতে পারলেন না!”— প্র’য়াত জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রাক্তন স্ত্রী অনন্যা!
তাঁর চলে যাওয়াটা যেন এক শূন্যতা তৈরি করেছিল টলিপাড়ায়। আজও সাত বছর পর দর্শকরা ভুলতে পারেননি সুচেতাকে। সহকর্মীদের কাছে তিনি শুধু একজন ভালো অভিনেত্রী নন, ছিলেন একজন লড়াকু মানুষও। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাল না ছাড়ার শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন তিনি। সুচেতার অনুপস্থিতি আজও অনুভব করেন অনেকে, তবে তাঁর কাজ আর লড়াইয়ের গল্প চিরকাল বেঁচে থাকবে।