মাত্র ১৩ বছর বয়সে হারিয়েছেন বাবাকে, নিজের গয়না বেচে, সমস্ত সম্বল দিয়ে মা দাঁড় করিয়েছিলেন কাকাদের! তারাই পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়! কঠিন লড়াই লড়ে আজ জীবন যুদ্ধে সফল সঙ্ঘশ্রী! স্বপ্নপূরণ করেছেন মায়ের!

বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ ‘সঙ্ঘশ্রী সিনহা মিত্র’র (Sanghasri Sinha Mitra) হাসিমুখের পেছনে লুকিয়ে আছে অজস্র কষ্টের গল্প। যাঁকে দর্শকরা চেনেন ‘কি করে তোকে বলব’ বা ‘ফেলনা’র মতো ধারাবাহিকের প্রাণবন্ত চরিত্র হিসেবে, তাঁর জীবনের পথচলা ছিল লড়াইয়ে ভরা। বরাবর স্পষ্ট কথা বলতে বিশ্বাস করেন তিনি। কোন কথা মনে রেখে দেন না, বরং মনে যা মুখেও তাই তাঁর। খোলামেলা স্বভাবের এই মেয়েটার জীবনে ঝড় এসেছে বহুবার! মালদার মেয়ে, সে আজ নিজের জায়গা তৈরি করেছেন টলিউডে, কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে অসংখ্য অন্ধকার গলি পেরিয়ে।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান সঙ্ঘশ্রী। বাবা ছিলেন পরিবারের বড় এবং সংসারের স্তম্ভ, তাই তাঁর মৃ’ত্যুর পর একান্নবর্তী পরিবার থেকে আলাদা হয়ে পড়েন তাঁরা। এক সময় যেই কাকাদের নিজের গয়না বিক্রি করে মা সংসারে দাঁড় করিয়েছিলেন, সেই আত্মীয়রাই পরে দায়িত্ব নিতে পিছিয়ে যান— এমনকি অভিনেত্রীর বিয়েতেও কেউ উপস্থিত হননি উপহার দেওয়ার ভয়ে। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে শিখিয়েছে একা পায়ে চলতে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আশুতোষ কলেজে পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসেন তিনি।

সেখানে মিডিয়া স্টাডিজ পড়ার সময় থিয়েটার জগতের সঙ্গে পরিচয় হয়, আর সেখান থেকেই অভিনয়ের স্বপ্ন আরও প্রবল হয় তাঁর মধ্যে। যদিও এই স্বপ্নপূরণের পথে তাঁকে মোকাবিলা করতে হয়েছে কটাক্ষের ঝড়। বেশি ওজনের জন্য অসংখ্যবার বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন সঙ্ঘশ্রী। “এই চেহারায় অভিনেত্রী হতে চাওয়াও পাপ!”— এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছেন নিজের সুযোগের জন্য। অবশেষে রাজ চক্রবর্তীর ‘লে ছক্কা’-তে ছোট্ট এক সুযোগ পান, আর সেই থেকেই শুরু হয় নতুন অধ্যায়।

ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল গভীর ক্ষতের ছাপ। এক সময়ে দীর্ঘ ১১ বছরের বিষাক্ত সম্পর্কে ছিলেন তিনি। সঙ্ঘশ্রীর ভাষায়, “রোজ আমার উপর অত্যাচার করত, ক্ষমা করলেও ওটাই ওর স্বভাব! বদলাবে কী করে?” অবশেষে সমস্ত সাহস জুগিয়ে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। পরে মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করেন ২০১৭ সালে। সেই মানুষটি আজ তাঁর জীবনের শক্তি। অভিনেত্রীর কথায়, স্বামীই তাঁকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে নতুন করে শুরুর জন্য কোনও বয়স লাগে না। আজ সুখে সংসার করছেন সঙ্ঘশ্রী, তবে কখনও ভুলতে পারেন না সেই বছরগুলোর লড়াই।

আরও পড়ুনঃ “আমরা তিনজনেই একই পেশায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে…সব সময় চেষ্টা করি, বাড়িটাকে ঘরে পরিণত করতে!”— কৌশিক সেনের বিশেষ উদ্যোগে মুগ্ধ ‘স্বার্থপর’ সহ-অভিনেত্রী কোয়েল! পরিবারের উষ্ণতা অটুট রাখতে অভিনেতা ‘ঘর বানানো’র কী মন্ত্র শেখালেন?

তিনি বিশ্বাস করেন, সুযোগের দরজা নিজেকেই খুলে নিতে হয়। আজও কম বেশি বডি শেমিং হয় তাঁর সঙ্গে। যদিও এখন আর সেই সব নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। বরং নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করেই তিনি বলেন– “যেটা আমার জন্য লেখা আছে সেটা আমি পাবই, তার জন্য চেহারা বা অন্য কিছু বাধা হতে পারে না!” এখন তিনি হাসিমুখে বলেন, “মালদায় চুটিয়ে প্রেম করেছি। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করতাম, হয়তো সমাজবিরোধী হতো!” এই সরলতাই তাঁকে আলাদা করে তোলে— এক যোদ্ধা নারী, যিনি নিজের জীবনের স্ক্রিপ্ট নিজেই লিখেছেন।