‘আগে মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, সেনদের আনাগোনা ছিল, এখন সাহা-শুঁড়িরা বেনোজল হয়ে ঢুকে পড়েছে।’ শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কথায় কেঁদে ভাসিয়েছিলেন, মন খারাপের কথা শোনালেন অনামিকা সাহা!

টলিউডের একসময়ের এক জনপ্রিয় মুখ বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ‘অনামিকা সাহা’ (Anamika Saha)। ইন্ডাস্ট্রির দাপুটে খলনায়িকা নামেই পরিচিত তিনি। পরবর্তীতে মায়ের চরিত্রেও আপামর দর্শকদের আবেগে ভাসিয়েছেন তিনি। কেরিয়ারের এই লম্বা যাত্রাপথে তিনি যেমন পেয়েছেন প্রশংসা, ভালোবাসা, আর সাফল্য, ঠিক সেরকম ভাবেই একসময়ে কপালে জুটেছিল তাচ্ছিল্য। এক সময় শুধু পদবীর কারণে তাঁকে শুনতে হয়েছিল এমন অপমান, যা আজও তাঁর মনে গভীর ক্ষত হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

তখন অনামিকা ছিলেন একেবারে নবাগত ইন্ডাস্ট্রিতে, সিনেমার সেটে ছিলেন নামজাদা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে হতো হাসি-মজা, আড্ডা—সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু সেই সুন্দর মুহূর্তই যে পরিণত হবে অপমানের রূপে তা কেউ ভাবেনি। অভিনেত্রীর সামনেই এক জনপ্রিয় অভিনেতা তাঁর পদবী নিয়ে কটাক্ষ করে এমন কিছু বলেছিলেন, যা নতুন শিল্পী হিসেবে অনামিকার আত্মবিশ্বাসই ভেঙে দেয়।

উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও (Soumitra Chatterjee), যিনি কিন্তু সে সময় প্রতিবাদ না করলেও, চমকে গিয়েছিলেন সহঅভিনেতার এমন আচরণে। কথা হচ্ছে ‘শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়’ (Shubhendu Chattopadhyay) কে নিয়ে। অভিনেত্রীর কথা অনুযায়ী, সেই দিন এই প্রখ্যাত অভিনেতা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলেন, “টালিগঞ্জে আগের মতো আর ‘ভদ্র পদবী’ওয়ালাদের দাপট নেই। আগে যেখানে ‘উচ্চবংশীয়’-দের আনাগোনা ছিল, সেখানে এখন ‘সাহা, শুঁড়ি, শুয়োর’রা বেনোজল হয়ে ঢুকে পড়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে।”

এমন কটূক্তিতে হতভম্ব অনামিকা চোখের জল নিয়ে বেরিয়ে যান টেকনিশিয়ান স্টুডিও থেকে। প্রতিবাদ করার মতো জায়গায় ছিলেন না, শুধু মনের ভিতরটা চুরমার হয়ে গিয়েছিল অপমানে। বাড়ি ফিরে মা-কে প্রশ্ন করেছিলেন ‘সাহা’ পদবী কি খারাপ? সাহা-শুঁড়ি মনে কি? মা তখন বুঝিয়েছিলেন, তাঁদের পদবী বৈশ্য শ্রেণিভুক্ত হলেও, তা কোনো অপমানের নয় এবং শুঁড়ি যারা মদের ব্যাবসা করে তাদের বলে। কিন্তু অনামিকার মনে সেই অপমানের দাগ এতটাই গভীর ছিল, যে আজও তাঁকে কাঁদিতে ফেলে সেই স্মৃতি।

আরও পড়ুনঃ আদির স্মৃতি ফেরানোর চেষ্টায় ঝামেলা সৃষ্টি হল রায় বাড়িতে! শুভ’র কথা শুনে অবাক হল আদৃত, মোহনার প্রতি টান অনুভব করছে সে?

একসময়ে যিনি পর্দায় সকলকে কাঁদতেন, পর্দার বাইরে তাঁকেও একদিন কাঁদতে হয়েছিলো– সেই দিন তিনি প্রথম বুঝেছিলেন, টলিউডের দুনিয়া শুধু প্রতিভা নয়, পরিচয় নিয়েও বিচার করে। তবে সময় বদলেছে, অনামিকার পরিশ্রম আর প্রতিভা আজ তাঁকে এনে দিয়েছে এক আলাদা জায়গা। আজ তিনিই বলেন, টলিউডে সাহা পদবীর যাত্রা তাঁকে দিয়েই শুরু। এরপর এসেছে স্বপন সাহা, আরও অনেক সাহা—যাঁরা প্রমাণ করেছেন প্রতিভা কোনও পদবীর ধার ধারে না।