অবশেষে মুখ খুললেন তিনি! চার দশকেরও বেশি সময় টলিউডে কাটিয়ে আজ বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ‘অনামিকা সাহা’ (Anamika Saha) জানালেন সেই না বলা অধ্যায়ের গল্প, যা এতদিন পর্দার আড়ালেই ছিল। দক্ষিণ কলকাতার নিজের বাড়িতেই থাকেন, যেখানে একদিকে সংসার, অন্যদিকে হাজারো স্মৃতি। এক সময়ের ঊষা সাহা কীভাবে হয়ে উঠলেন ‘অনামিকা সাহা’? গায়ের রং থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির উপেক্ষা, সবকিছুর ঊর্ধ্বেও তিনি দাগ কেটে গেছেন সকলের মনে। সেই সব অভিজ্ঞতাই এক সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
ঊষা থেকে অনামিকা হওয়ার পেছনে রয়েছে এক আশ্চর্য কাকতালীয় ঘটনা। ছবির শুটিং দেখতে এসেছিলেন দিদির সঙ্গে, দিদির কথা মতো অচেনা ব্যক্তিকে পরিচয় না দেওয়ায় স্টুডিয়োর বাইরে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, “তুমি কি অনামিকা?” সেই ঘাড় নেড়ে সম্মতিতেই তৈরি হয়ে যায় নতুন পরিচয়, নতুন জীবন। কিন্তু এই নতুন জীবনের পথটা মোটেও সহজ ছিল না। ও পার বাংলার মেয়ে হয়ে এ পারের ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেওয়া ছিল চরম সংগ্রামের বিষয়।
তখনকার সময় সিনিয়র শিল্পীদের দাদাগিরি ছিল খোলাখুলিই। নতুনদের জন্য জায়গা তৈরি করার মানসিকতা প্রায় কারও মধ্যেই ছিল না। সেই প্রতিকূলতার মধ্যেই কাজ পেয়েছেন, নিজেকে প্রমাণ করেছেন অনামিকা। তবে তার মধ্যেও থেকে গিয়েছে অপমান, উপেক্ষা আর অসহায়তা। গায়ের রং প্রাথমিক বাধা হলেও, একাধিক কাজ হাতছাড়া হয়েছে শুধু এই কারণে যে তিনি কোনওদিন প্রযোজকের ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠ’ হতে পারেননি।
সবচেয়ে চমকে দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর এক ছবির প্রস্তাব হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা। পরিচালক ‘বিজয় বসু’ নিজেই তাঁকে ডেকেছিলেন, ‘তাপস পাল’ ও ‘শতাব্দী রায়ে’র সঙ্গে একটি ছবিতে খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উত্তেজনায় নিজে গিয়ে দেখা করেছিলেন পরিচালকের সঙ্গে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর পরিবর্তে নেওয়া হবে সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়কে।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রযোজক কেএল কপূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জোরে সুমিত্রাদির বাজারদর অনেক বেশি!” অনামিকা সেদিন বুঝে গিয়েছিলেন, প্রতিভা নয়, সম্পর্কই এখানে সুযোগ তৈরি করে। তবে শুধু এই একটিই নয়, আরও একাধিক কুরুচিকর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করেছেন অনামিকা সাহা। এক প্রযোজকের পার্ক স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠানোর পর কী হতে পারত, তা আগে থেকেই শুনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
অনামিকা জানতে পারেন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কোনও অভিনেত্রী আসলেই সেই প্রযোজক তাঁদের নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠান। এক হুইলচেয়ারে বসা প্রযোজকের নানা ‘অসভ্যতা’র কথা শুনেই কেঁপে উঠেছিলেন। ওই সময় তার জীবনেও এসেছিল নতুন প্রেম, যা কিছুটা হলেও সাহস জুগিয়েছিল। আজ আর কাজ হারানোর ভয় নেই। এখন বয়স, অভিজ্ঞতা, এবং সব থেকে বড় কথা—মনের জোর পেয়েছেন অনামিকা।
আরও পড়ুনঃ “এখনকার পরিচালকরা আমাকে অশিক্ষিত ভাবেন, তাই কাজে ডাকেন না!” বর্তমান সময়ে পরিচালকদের ধ্যানধারণা নিয়ে বিস্ফোরক টলি অভিনেতা শুভাশীষ মুখোপাধ্যায়!
তিনি বলেন, “মুখোশ খুলে দেওয়ার এটাই সময়, আর কতদিনই বা কাজ করতে পারব। তার আগে মনের মধ্যে যার জমা আছে, সবটা বলে যেতে চাই।” এতদিনের চুপ করে থাকার যন্ত্রণা ভেঙে বলছেন, কারণ এখন আর কিছু হারানোর নেই। নিজের লড়াই, অপমান, এবং না বলা ঘটনাগুলো জানিয়ে দিচ্ছেন, যেন ভবিষ্যতের কোনও শিল্পীকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হতে হয়।