রেডিওর সোনালি যুগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র পতন। আকাশবাণী কলকাতার (Aakashvani kolkata) প্রাক্তন ঘোষক ‘মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Mihir banerjee) আর নেই। মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু একজন ঘোষক নন, ছিলেন এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর স্পর্শে আকাশবাণীর পরিসর আরও প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছিল। তাঁর প্রয়াণে (Death) এক যুগের অবসান ঘটল। রেডিওর দিনগুলি যাঁদের জীবনের অংশ ছিল, তাঁদের কাছে মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল একজন মানুষ নন, এক স্মৃতিময় সময়ের নাম।
বহু প্রজন্মের শ্রোতাদের স্মৃতিতে যাঁর কণ্ঠ এক অভিন্ন অনুভূতি হয়ে গেঁথে রয়েছে, তাঁর প্রয়াণে রেডিওজগত ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে নেমে এসেছে গভীর শোক। ১৯৬৫ সালে আকাশবাণী কলকাতায় ঘোষক হিসেবে নিজের যাত্রা শুরু করেছিলেন মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি রেডিওজগতের এক অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠেছিলেন। নিজের কণ্ঠে জাদু দিয়ে একের পর এক শো কে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
‘সবিনয় নিবেদন’, ‘গল্প দাদুর আসর’ সহ বহু জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি উপস্থাপনায় ছিল আবেগ, ছিল আন্তরিকতা। তাঁর মধুর কণ্ঠস্বর ছাড়াও, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ উপস্থাপক ও প্রাণবন্ত গল্পকার। শুধু ঘোষক হিসেবেই নয়, বাংলা গান ও সংস্কৃতির প্রতিও তাঁর গভীর টান ছিল। বাংলা সিনেমার পুরোনো গানের অনুষ্ঠানগুলোতে তাঁর উপস্থাপনার ধরণ শ্রোতাদের এক আলাদা আবেশে ডুবিয়ে রাখত।
সুকণ্ঠের অধিকারী এই মানুষটি নিজেও কিছু গান রচনা করেছিলেন, যা প্রমাণ করে তাঁর দক্ষতা শুধুমাত্র ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আকাশবাণীর ইতিহাস, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, ও সম্প্রচারের নানান দিক নিয়ে তাঁর জ্ঞানের পরিধিও ছিল প্রশংসনীয়। তাঁর প্রয়াণের পর সামাজিক মাধ্যমে উঠে এসেছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভরা অগণিত বার্তা। এক শ্রোতা লিখেছেন, “ওনার কণ্ঠ আমাদের শৈশবের সঙ্গী ছিল, সেই গলা আজও মনে গেঁথে আছে।”
আরও পড়ুনঃ “অনেক সময়ে অযোগ্যরাই কাজ পায়, শুধু প্রতিভা থাকলে হয় না!”— টলিউডে অডিশন শুধু নামেই হয়? ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের সত্যি সামনে এনে বি’স্ফো’রক অর্পণ ঘোষাল!
অনেক সহ কর্মীরাই উল্লেখ করেছেন, তাঁরা কর্মজীবনে মিহির বাবুর স্নেহ ও সহানুভূতির পরশ পেয়েছেন। তাঁর মতো কণ্ঠস্বর আর ফিরে আসবে না—এই শূন্যতা অনেকের মনেই দাগ কেটে গেছে। গত ১৬ই মে দক্ষিণ কলকাতার নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। সংবাদটি নিশ্চিত করেছে আকাশবাণী সংবাদ কলকাতা। তাঁর প্রতি রইল আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও চিরন্তন কৃতজ্ঞতা!