বাংলা সিনেমা এবং ধারাবাহিকের জগতে খুব জনপ্রিয় মুখ লিলি চক্রবর্তী। তার অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা এবং সৌন্দর্যের কারণে তিনি বারবার জিতে নিয়েছেন দর্শকদের মন। উত্তম কুমার থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সকলের সঙ্গেই সমান দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে বারবার প্রমাণ করেছেন তিনি নিজেকে। তিনি প্রথম অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন ভানু পেল লটারি সিনেমার মাধ্যমে। ভানু গোয়েন্দা জোহর এসিস্ট্যান্ট, প্রতিদান, দুই পুরুষ, পিতা সর্গ পিতা ধর্ম, উত্তরণ, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, ফুলেশ্বরী, মান সম্মান, সংসার সংগ্রাম, শাখা প্রশাখা, সুন্দরী বউ, শেষ চিঠি, অবলম্বন, চোখের বালি, দেয়া নেয়া, বসু পরিবার, তুমি ও তুমি, সাঁঝবাতি, চিনি ২, অর্ধাঙ্গিনী সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এছাড়াও তুমি রবে নীরবে, ভুতু, গোয়েন্দা গিন্নি ধরাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাকে দেখা যাচ্ছে জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক নিম ফুলের মধুতে। ধারাবাহিকে হেমনলিনী অর্থাৎ সৃজনের ঠাম্মির চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। সম্প্রতি তার সাক্ষাৎকার নিতে গেছিলেন সাংবাদিকরা, সেখানেই তিনি জানিয়েছিলেন তার এই দীর্ঘ অভিনয় জীবন সম্পর্কে। সাংবাদিকরা অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিল এই এত বছরের দীর্ঘ অভিনয় জীবন, কেমন করে সামলেছেন তিনি নিজেকে?
তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন “মানুষের মনে জোর থাকা চাই, আমি চাই আমি যেন কাজ করতে করতে শেষ হয়ে যাই, বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না, মনে হয় যতদিন কাজ করব সুস্থ থাকব। তবে আমার তখন ইচ্ছে ছিল সমস্ত নাম করা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করব, কাজ করা মানেই তাদের থেকে নতুন কিছু শেখা। যেমন ছবি বিশ্বাস, উত্তর কুমার, পাহাড়ি সান্যাল, কমল মিত্র, ছায়া দেবী। আমি সবসময় সেটে বসে থাকলাম এখন দেখি সবাই বেরিয়ে যায় আমি এখনও বসে থাকি। সেটে থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়।” জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
এখন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে হটাৎ দেখা হলে কি বলবেন? তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন “এখন হয়তো ভালো করে চিনতে পারবেন না। মাত্র দুটো ছবি করেছি। কিছুসময় আগে তার সিনেমার সবাইকে নিয়ে একটা সভা হয়েছিল সেখানে মীর সঞ্চালক ছিল, আমি একদম সামনে বসে ছিলাম মীর আলাপ করিয়ে দিল ওনাকে আমার সঙ্গে তিনি আসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেমন আছেন?” ঋতুপর্ণ ঘোষের শুভ মহরৎ ছবিতে প্রথমে আপনার থাকার কথা ছিল তারপর কি হল? তিনি বলেছিলেন “ঋতুপর্ণ ইটিভির প্রোগ্রামে সকলের সামনে চেচিয়ে বলেছিল সিনেমাতে রাঙা পিসি থাকবে। ও চেয়েছিল আমি করি কিন্তু প্রডিসার টাকা দিয়েছেন তাই তিনি রাখিকে নিয়ে নেন। যদিও ছবিটা চলেনি কিন্তু খুব ভালো গল্প ছিল, তারপর আমায় চোখের বালিতে নিয়েছিল দিয়ে বলেছিল ওটাতে নিতে পারিনি বলে নিলাম তা নয়, এটাতে তোকেই মানায়।”
তিনি এও জানিয়েছিলেন “ও আমায় বলেছিল আমি তোকে তুই করে বলি বলে সবাই গাল দেয় কি করব তখন আমি বলেছিলাম যেটা তোর ভালো লাগে সেটা বলবি।” অভিনেত্রীরা সর্বদাই নিজের সাজসজ্জা নিয়ে খুব সচেতন, তিনিও কি তাই ছিলেন? অভিনেত্রী উত্তরে জানিয়েছিলেন “আমি সাধারণ ভাবে সাজতে ভালোবাসতাম। আমার স্বামী যদিও আমার শরীর নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন, শরীরচর্চা করতেন। সারা সপ্তাহ ভাত না খেয়ে একদিন ভাত খেতাম। তবে পোশাক নিয়ে আমি ব্র্যান্ড দেখি না আমি যেটা ভালো লাগে তাই পড়েছি, এখনও তাই পড়ি।”
অভিনেত্রী এও বলেছিলেন “উত্তম কুমার আমায় বলেছিলেন বৌঠান একইরকম চেহারা কিসের চাল খান।” উত্তম কুমারের সঙ্গে স্মরণীয় মুহুর্ত? তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন “আমায় ভোলা ময়রার সিনেমায় রোল দিয়েছিলেন তিনি। সেদিন জর্দা দেওয়া পান খেয়ে আমি একবার অসুস্থ হয়েছিলাম উনি আসে বলেছিলেন যেটা সহ্য হয়না সেটা খাও কেন? আমায় বেনুদি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। ৪ ঘণ্টা পর আমি ঘুম থেকে উঠে শুনেছিলাম আমার শট পরে নিতে এবং আমার খাওয়ার গরম করে দিতে বলেছেন তিনি। ওনার ব্যবহার এখনও মনে আছে।”
অপুর সংসারে অভিনয় করা হল না কেন? “এখন মনে হয় ওটা করলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হত, তবে যেই দুটো করেছি তাতেই খুশি।” সত্যজিত রায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা? “প্রথমে আমায় একটি চরিত্রে নেওয়ার জন্যে উনি বাড়িতে ডেকেছিলেন আমি বাবার সঙ্গে গেছিলাম। ওখানে বৌদির (বিজয়া রায়) শাড়ি পরিয়ে ছবি তুলেছিলেন, বলেছিলেন পছন্দ হয়েছে কিন্তু অন্যকাউকে নেওয়ার কথা আছে তুমি কিছু মনে করো না আমি বলেছিলাম ঠিক আছে কিন্তু তখন জানতাম না উনি কে। তারপর জনঅরণ্যের জন্য আমায় চিঠি লিখেছিল। সেই থেকে কাজ।”
আরো পড়ুন: অনুরাগে দুশ্চিন্তার কালো ঘনঘটা! জেল থেকে পালালো মিশকা, এবার দীপার জীবনে কোন ক্ষতি করতে ঝড়ের মতো ধেয়ে আসছে সে?
তবে তিনি জানিয়েছিলেন এখনকার প্রযোজকরা সবাই ভালো তবে কৌশিককে ভালো লাগে। ওর সঙ্গে “অযোগ্য” ছবি আসছে সেখানে বাম্বার মা হয়েছি।” তিনি জানিয়েছেন উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, তরুণ কুমার। এছাড়াও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় আমার অনুপ্রেরণা, মলিনা দেবী, ছায়া দেবী। ওনার প্রিয় সহ অভিনেতা অভিনেত্রী। সমকালীন অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে? “মাধবী মুখোপাধ্যায় এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে যোগাযোগ আছে। ফোন নম্বর আছে।” সবচেয়ে বড় আক্ষেপ এবং প্রাপ্তি? “শিল্পীদের মনে সবসময আক্ষেপ থাকে ভালো চরিত্রের। আর এখানে দাড়িয়ে আছি সেটাই প্রাপ্তি।” তিনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আরও কাজ করুন এটাই কামনা।