টলিউডের ( Tollywood ) জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে ( Swastika Mukherjee ) সকলেই খুব স্পষ্টবাদী ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলেই জানেন। নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক হোক অথবা সমাজের অবক্ষয় যে কোনও পরিস্থিতিতে তিনি সেটাই বলেন, যেটা তার ঠিক বলে মনে হয়। এই কিছুদিন আগে আর জি কর কাণ্ডের ( Rg Kar Incident ) সময় তিলোত্তমা মিছিলে পা মিলিয়ে ছিলেন তিনি, স্বাস্থ্য ভবনে প্রতিবাদীদের সঙ্গে রাত জেগেছিলেন, এই ঘটনায় প্রথম থেকেই প্রতিবাদে মুখর ছিলেন তিনি। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানান, এই বছর দুর্গাপুজোয় তিনি মায়ের কাছে প্রার্থনা করবেন এই দুঃসময় যাতে তাড়াতাড়ি কেটে যায়।
একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন, “ দুর্গাপূজাটা আমাদের বাঙালির কাছে বা হিন্দুর কাছে এত বড় একটা উৎসব, সেখানে নারীর পুজোই তো করি আমরা কিন্তু আমাদের রোজকার জীবনে নারীদেরই হেনস্থার শিকার হতে হয়। এটা কিন্তু দ্বিচারিতা। মা দুর্গার পুজো করছি, মা কালীর পুজো করছি, কিন্তু আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত আমরা মেয়েদের প্রতি সেই সম্মানটা বজায় রাখতে পারছি না।সেটার যাতে একটা সুরাহা হয়।”
এরপর অভিনেত্রী বলেন তার এই প্রতিবাদটা শুধু একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নয়। অভিনেত্রীর কথায়, “
এটা তো শুধু একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া প্রতিবাদ নয়। ২০২১ এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল ভারতবর্ষে প্রতি ঘন্টায় ৪৯ টা রেপ হয় অর্থাৎ সমাজের ভেতরটাই পচে গেছে। মানুষের ভাবনাটা এতটা নিকৃষ্ট হয়ে গেছে, সেটাকে যদি আমাদের বদলাতে হয়, তাহলে বাড়ি থেকেই, একদম ছোট বয়স থেকেই সেই শিক্ষাটা শুরু করতে হবে। ছেলেদের কথা আমি বিশেষ ভাবে বলব, এখন সবাই ৭-৮ বছর বয়স থেকেই সব কিছু জেনে যায়, তাই এই শিক্ষাটা বাবা-মায়েদের দিতে হবে তাদের ছেলেদের, কারণ বদলটা একদম গোড়া থেকেই হওয়া দরকার। ”
এরপর তিলোত্তমার আন্দোলনে নেমেও মেয়েদের শ্লীলতাহানি হয়েছে এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, “ খুবই দুঃখজনক বিষয় এটা, যে মেয়েদের সুরক্ষার জন্য লড়াই সেই আন্দোলনের মধ্যে মেয়েদেরকে অপদস্থ করা হচ্ছে বা সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিনিয়ত যে কদর্য নোংরা ভাষার প্রয়োগ করা হয় আমার মনে হয় আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে মেয়েদের শরীরসর্বস্ব পদার্থ বলে ধরা হয়। প্রত্যেকবার তার জামাকাপড়, তার চেহারা নিয়েই কেন কথা হবে অন্যভাবেও তো বলা যায় যে দেখো এই মহিলার মুখের ভাষা খারাপ বা বাচন ভঙ্গি , শব্দ চয়ন খারাপ বা মাথায় গোবর আছে, মেয়েটা বোকা! কিন্তু না প্রতিবার শরীর নিয়েই মন্তব্য করা হয় মেয়েরা কি শরীরের বাইরে কিছু না? ”
এরপর কুনাল ঘোষের বক্তব্য নিয়ে স্বস্তিকা সরাসরি বলেন, “ যারা মুখপাত্র হয়ে এটা করছেন তারা মিউজিক্যাল চেয়ার খেলছেন। আজকে আমি, কাল সুদীপ্তা, তারপরের দিন দেবলীনা, তার পরের দিন মৌসুমী, তারপর অন্য কেউ। সেটা যদি ওনাদের শিক্ষা হয়, ওনাদের বাবা-মায়েরা যদি এটাই শিখিয়ে থাকে ওনাদের, ওনারা এইভাবে চলবেন।”
তিলোত্তমা কান্ডে প্রথম থেকে তার সরব হওয়া নিয়ে কুনাল ঘোষ বলেছিলেন তিনি টেক্কা ছবি প্রচারের জন্য এসব করছেন, এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন,“ ছবির পোস্টার কী হবে সেটা অভিনেত্রীরা ঠিক করতে পারেন না। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেত্রীদের হাতে এত ক্ষমতা থাকে না। এই টেক্কা ছবির বিষয়বস্তুই হল মেয়ের হারিয়ে যাওয়া আর একটা একটা মজার জিনিস হচ্ছে এই যে কথাটা যেটা পোস্টারে আছে যে আমার মেয়েকে কবে ফেরত পাব? তার পাশে কিন্তু রুক্মিণীরও একটা উত্তর আছে যে, সময়! এই দুটো বক্তব্য কিন্তু পাশাপাশি রাখা হয়েছে। এখন আমাকে নিয়ে বিতর্ক ছড়ানোর জন্য রুক্মিণীর পোস্টারটাকে বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। এটা তো আমার উদ্দেশ্যমূলক বলেই মনে হয় কারণ আরও দুটো ছবিও তো প্রকাশ পাচ্ছে পুজোর সময়। তারাও তো পোস্টার দিচ্ছে, প্রমোশন করছে, কই তাদের নিয়ে তো মাথাব্যথা নেই।”
আরও পড়ুন: ঈশাকে আচ্ছা টাইট দিল পর্ণা! দাবাং নায়িকার ভয়ে জুজু ভিলেন ঈশা, জমে ক্ষীর নিম ফুলের মধু
একইসাথে অভিনেত্রী বলেন,“ মা হিসেবে এবং একা মা হিসেবে আমার মেয়ে যদি এদেশে থাকত সে বোম্বে হোক, দিল্লি হোক আমি জানি না কতটা নিশ্চিন্তে আমি কাজ করতে পারতাম বা আমি রাত্রে ঘুমোতে পারতাম কিনা! কারণ আর জি কর ঘটনার আগেও তো বহু এরকম ঘটনা ঘটেছে যেখানে দিনের বেলায় বাজারে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অনেক মানুষ এটার ভিডিও করেছেন কিন্তু কেউ গিয়ে বাধা দেন নি। তাদের কাছে এক্সক্লুসিভ ভিডিও করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। শুধু মানুষ কেন পশুরাও তো বাদ যাচ্ছে না। তাই আমি চাই আমার মেয়ে বিদেশেই থাকুক সেখানেই চাকরি করুক।”