বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাস মনে করলে যে কয়েকজন শিল্পীর নাম সর্বপ্রথম তালিকায় উঠে আসে তার মধ্যে একজন হলেন তুলসী চক্রবর্তী। যার অভিনয় গুনে পঞ্চাশ দশকের একাধিক সিনেমা হয়েছে সুপার হিট। টলিউড কখনোই তাকে তার যোগ্য সন্মান দিতে পারেনি। তার অসাধারণ অভিনয়ের প্রতিভার জন্য তাকে যে পারিশ্রমিকটা দেওয়া হতো তা খুবই নগণ্য। সেই সঙ্গে নিজের মূল্যটুকু বুঝতে পারেনি, তুলসী চক্রবর্তী। তাই জন্য তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে অর্থ সংকটে কাটাতে হয়েছে।
আসলে জীবনের প্রথম দিন থেকেই চরম দারিদ্রতার মধ্যে কেটেছিল তুলসী চক্রবর্তীর। ১৮৯৩ সালে তার জন্ম হয়। ১৯৩২ সালে তার অভিনীত প্রথম ছবি মুক্তি পেয়েছিল যার নাম “পুনর্জন্ম”। তবে ছবিতে কাজ করবার আগে তিনি যাত্রা পালা এবং নাটকে নিজের অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে সুনাম কিনেছিলেন।
পঞ্চাশের দশকে প্রায় পর পর ১১ থেকে ১২ ছবি মুক্তি পেয়েছিল তুলসী চক্রবর্তী অভিনীত। কিন্তু তারপরেও তার দারিদ্রতা কাটেনি। আজীবন ট্রামে বাসে চড়ে যাতায়াত করতেন স্টুডিও পাড়াতে। আসলে তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করত যদি পারিশ্রমিক বাড়ালে তাকে আর কেউ কাজে না নেয়। আর সেই সুযোগগুলো নিত তখনকার পরিচালকরা, কম পারিশ্রমিকে তুলসী চক্রবর্তী মত একজন অভিনেতাকে কাজ করিয়ে নেওয়া হতো।
কিন্তু সেই সময় দাঁড়িয়ে বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই অভিনেতার কদর করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তুলসী চক্রবর্তী ঠিক কি জাতের অভিনেতা। তাই তিনি তার পরশপাথর ছবিতে অভিনয় করার জন্য তুলসী চক্রবর্তীর পারিশ্রমিক অনেকটাই বাড়িয়েছিলেন। সেই পারিশ্রমিক শুনে তুলসী চক্রবর্তী সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই দেখে সত্যজিৎ রায় বেশ অনেকটাই বিব্রত হয়েছিলেন তার কারণ তিনি নিজেও জানতেন যে তিনি যে পারিশ্রমিক টুকু এই মানুষটাকে দিচ্ছে সেটি তার অভিনয়ের কাছে অনেকটাই কম।
কিন্তু এত বড় মাপের একজন অভিনেতাকে কখনোই কদর করেনি টলিউড। আজও পর্যন্ত একটা জাতীয় পুরস্কার তো দূর একটা পদ্ম পুরস্কার জোটেনি অভিনেতার। তুলসী চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে লোকের দরজায় দরজায় ভিক্ষা করে কাটাতে হয়েছিল। তবে সেই সময় তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এবং আর্টিস্ট ফোরাম।