জীবনযুদ্ধের তীব্র লড়াই! প্রথমে বাবা তারপর মায়ের মৃত্যু, পাননি শেষ দেখাও! মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে গান আঁকড়ে বেঁচে আছেন গায়িকা সোমলতা আচার্য

তিনি গায়িকা সোমলতা আচার্য চৌধুরী! যাঁর গলায় রবীন্দ্রসংগীত শুনে বিমুগ্ধ হয়েছে বাঙালি শ্রোতা। আসলে সোমলতা নামটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই মাথায় আসে ‘তুমি আসবে বলে’ বা গিটার হাতে রবীন্দ্রসংগীত ‘মায়াবনবিহারিণী হরিণী’। তবে তিনি ভীষণ রকম ছকভাঙা। তথাকথিত রবীন্দ্র গীতিকারদের মতো নন তিনি। ভিন্নতা তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।

ভীষণ রকম কম কথা বলার মানুষ তিনি। আর তাঁর এই কম কথা বলাকে অনেকেই নাকি অহংকার বলে ধরে থাকেন। তবে গায়িকার মধ্যে তিনি ভীষণ রকমের বোরিং এবং অতিরিক্ত সেনসেটিভ বলে তাঁকে মানুষ এমনটা ভাবেন। তাঁর কথায়, ‘আমি কম কথা বলি, কম হাসি বলে অনেকেই ভাবে এটা আমার অ্যাটিটিউড প্রবলেম। কিন্তু তা নিয়ে যদিও আমার সঙ্গে কারর সমস্যা হয়নি।’

যদি অভিনেত্রীর আক্ষেপ তার এই কম কথা বলা, কম মেশার জন্য অনেক কাজ হাতছাড়া হয়েছে।‌‌অকপটে তিনি বলেন আর একটু সকলের সঙ্গে মিশতে পারলে হয়ত বছরে ১০টা গানের জায়গায় ২০টা গান হয়তো গাইতে পারতাম। কিছু পুরস্কার বেশি পেতাম। কিন্তু আমার তাতে কোনও ক্ষোভ নেই। আমি অল্পেতেই খুশি থাকি। আসলে না পাওয়া, ব্যর্থতা তাঁকে কোনভাবেই গ্রাস করতে পারে না। তিনি যতটুকু পেয়েছেন ততটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট।

তবে শুধুমাত্র গায়িকা নয় একজন সাইকোলজির শিক্ষিকাও তিনি। আশুতোষ কলেজের এই প্রাক্তনী আশুতোষ কলেজেই শিক্ষকতা করেন‌। এবং ভীষণ রকম ভাবে নিজের এই পোশাকে উপভোগ করেন শিক্ষিকা সোমলতা আচার্য চৌধুরী। বিগত ১৩ বছর ধরে নিজের কলেজেই শিক্ষকতা করছেন তিনি।

এহন গায়িকার জীবনে হঠাৎ করেই বয়ে গিয়েছিল ঝড়। টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল ব্যক্তিগত জীবন। তবে ব্যক্তিগত সেই ধাক্কা সামলে মানসিকভাবে এখন অনেকটাই শক্ত সোমলতা। ২০১৮ সালে বিপর্যয়ের শুরু। গায়িকার বাবা ছিলেন সিওপিডির। একদিন হঠাৎ করে ভীষণ বাড়াবাড়ি হয়। দিতে হয় ভেন্টিলেশনে। সেই সময় নর্থ বেঙ্গলে শো করতে গিয়েছিলেন গায়িকা। আর সেখানেই খবর পান বাবা আর নেই। কিন্তু থেমে যাননি। বাবাকে হারানোর কষ্ট সামলে সেদিন মঞ্চ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

গায়িকার জীবনে বিরাট বড় ধাক্কা ছিল বাবাকে হারানো। কিন্তু হারানোর আরও কিছু ছিল বাকি। মহামারীর বছর ২০২০ সালে গায়িকার মায়ের ধরা পড়ে এক বিরলতম রোগ। পরের বছর কলকাতায় মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই খবর পান মা আর নেই। মা-বাবাকে হারানোর এই ক্ষত বোধহয় কোনদিনই পূরণ হয় না। আর আজ‌ও মা বাবার শেখানো নৈতিকতা, মূল্যবোধকে আঁকড়ে জীবন যুদ্ধে লড়াই করছেন সোমলতা।