স্টার জলসার ( Star Jalsha ) মহালয়ায় ( Mohalaya ) মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার রূপে এ বছরও অভিনয় করেছেন কোয়েল মল্লিক ( Koel Mallick )। অভিনেত্রী আগেই বলেছিলেন এই বছর দুর্গা পুজোতে সেই আনন্দ আসছে না, কারণ তিলোত্তমার শোক প্রত্যেকের ভেতরে রয়েছে। এমনকি মল্লিক বাড়ির পুজো এই বছর শতবর্ষে পা দিলেও এক্ষেত্রেও পুজোটাকে ভীষণ ব্যক্তিগত পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে বলেই জানান অভিনেত্রী। জনসাধারণের জন্য এবার মল্লিক বাড়ির পুজোর দরজা খোলা থাকবে না। কারণ এবার মায়ের পুজোটা পুজো রূপেই হবে , উৎসব হিসেবে নয় এমনটাই জানিয়ে দিলেন কোয়েল মল্লিক।
গত বছরের মত এই বছরও মা দুর্গার রূপে মহালয়ায় টিভি চ্যানেলে অভিনয় করা প্রসঙ্গে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন ,‘এবার আমরা দেবীকে রণমূর্তি ধারণ করতে দেখেছি… যতবার অন্যায় অনাচার নেমে এসেছে পৃৃথিবীতে ততবার নারীশক্তি জাগ্রত হয়ে পৃথিবী থেকে অন্ধকারের ছায়া মিটিয়ে নতুন আলোর দিশা দেখিয়ে চলে। এই বারের মহালয়া এটাই মূল আকর্ষণ। কখনও মাতৃ রূপে সে সন্তানকে রক্ষে করছ, কখনও নারীর সম্মান করছে, আবার কখনও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষে করছে অরাজকতা থেকে। সে তার শক্তি রূপ প্রকাশ করে অশুভের বিনাশ ঘটা,সেই নারী হয়ে উঠে রণং দেহী।’
কোয়েল পুত্র কবীর মাকে দুর্গা রূপে দেখার পর মায়ের তৃতীয় নয়ন দেখে খুব উৎসুক হয়ে থাকে বলেই জানিয়েছেন কোয়েল। অভিনেত্রী তাকে নিজের মতো করে বুঝিয়েছেন তৃতীয় নয়ন দেখা যায় না নিজের বুদ্ধি বিবেচনাই হল তৃতীয় নয়ন। অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছেলে গত বছর মহালয়ায় আমাকে দুর্গারূপে দেখে, মূলত আমার ত্রিনয়ন দেখে ও প্রচণ্ড ফ্যাসিনেটেড হয়ে পড়েছিল। বাকিগুলো ঠিক ছিল, মনে হয়েছিল মায়ের চুল একটু অন্যরকম, শাড়ি-গয়নায় মা-কে একটু অন্যরকম লাগছে। তবে তৃতীয় নয়ন থেকে খুব খুব ফ্যাসিনেটেড ছিল কবীর। শ্যুটিং শেষে বাড়ি আসার পর সেটাই খুঁজছিল। এ বছর ও বুঝতে পেরেছে মা দুর্গা মানে তৃতীয় নয়ন পরতে হবে। তৃতীয় নয়নের মানে বোঝবার মতো বয়স ওর হয়নি। তবে কবীর যতটুকু বুঝতে পারে, সেই মতো করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার নিজের বুদ্ধি, নিজের বিবেচনা এইগুলোই হল তৃতীয় নয়ন।’
আর পাঁচটা বাঙালির মত মহালয়া মানে কোয়েলের কাছেও নস্টালজিয়া। অতীতের মহালয়া ছোটবেলার মহালয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন ছোটবেলায় প্রথমে রেডিওতে মহালয়া শুনতেন তারা তারপর ডিডি বাংলার মহালয়া দেখতেন। রঞ্জিত মল্লিক নিজে উদ্যোগ নিয়ে মহালয়ার আগের দিন রাত থেকে সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখতেন। কোয়েলের কথায় , ‘মহালয়াটা আমার কাছে আবেগের স্মৃতিজাল। ছোটবেলায় আমার মনে আছে, বাবার আগের দিন রাত থেকেই তোড়জোড় শুরু করতেন, রেডিও-তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার জন্য সব সেট করে রাখতেন। আমরা সব উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। সেই সময় তো এখনকার মতো বোতাম টিপলেই মহালয়া শোনা যেত না। বাবা নিজের উদ্যোগে পরদিন ভোরে মা-কে, আমাকে ঘুম থেকে তুলতেন। এরপর জোরে রেডিও বাজতো, বীরেন্দ্রকৃ্ষ্ণ ভদ্রের সেই কণ্ঠ। গমগমে আওয়াজ, অসাধারণ একটা আবেগ। আসলে মহালয়া বাজছে মানেই তো মা আসছেন দুষ্টের নাশ করতে। ছোটবেলায় মাঝেমধ্যে ঘুমিয়েও পড়তাম, বাবা টেনে তুলে দিত। তারপর ডিডি বাংলায় মহালয়া যখন দেখানো হত, সেটা দেখতাম।’
এরপর মল্লিক বাড়ির পুজো প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন যেহেতু ১০০ বছরের পুজো তাই মল্লিক বাড়িতে পুজো হবে কিন্তু উৎসব হবে না। কারণ শহরবাসীর মতো তিলোত্তমার জন্য মন ভালো নেই তাদেরও। পুজোতে মনের মধ্যে থেকে যে আনন্দ প্রতিবার আসে এইবার সেটা আসছে না। অভিনেত্রী এই প্রসঙ্গে বলেন,‘এই বছর আমাদের মল্লিকবাড়ির ১০০ বছরের পুজো। পুজো যেমন প্রতি বছর হয়, এই বছরও হবে। যেহেতু একশো বছরের পুজো, অনেক আত্মীয়-স্বজন প্রতি পুজোয় আসতে পারেন না। কিন্তু এই বছর আসবেন, সেই পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করে রেখেছেন। পুজো পুজোর মতোই হবে, তবে উৎসবটা হবে না।’
আরও পড়ুনঃ বাস্তব জীবনেও প্রেম করছে স্রোত-সার্থক? তাদের প্রেমের কথা ফাঁস করল শৌর্য্য নিজেই!
একই সাথে অভিনেত্রী বলেন আরজিকরের ঘটনা ঘটার পর থেকে প্রত্যেকটা দিন তিনি তিলোত্তমার হয়ে ন্যায় বিচার চেয়েছেন। কোয়েল বলেন, ‘সবাই আমরা মন খারাপের জায়গায় আছি, প্রতি মুহূর্তে প্রার্থনা করছি তিলোত্তমা যেন সুবিচার পায়। যখনই হবে, কী বলব… তার থেকে বেশি আর কী চাইতে পারি? প্রথম যখন আরজি করের ঘটনা ঘটে, সেইদিন থেকে একটা দিন এমন যায়নি, যে আমি ওই মেয়েটির আত্মার শান্তি কামনা করে, তার জন্য সুবিচার চাইনি।’ গোটা শহর যেভাবে তিলোত্তমার জন্য প্রতিবাদ করে দৃঢ়তার সাথে ন্যায়বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন তাতে কোয়েল মল্লিক খুশি হলেও তিনি জানান যে তিনি প্রতিদিন মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেন আর কোনও বাবা-মার যেন এভাবে কোল খালি না হয়ে যায় এবং পৃথিবীর কোথাও যেন আর জি করের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।