এ যেন নাটকীয়তাকে ছাপিয়ে যাওয়া এক বাস্তব কাহিনি! ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’ (Uttam Kumar) এবং তাঁর ভাই ‘তরুণ কুমার’ (Tarun Kumar) এর সম্পর্ক ঠিক তেমনই এক আবেগঘন অধ্যায়, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। উত্তম কুমার নিজে বহুবার বলেছেন, তাঁর ভাই তরুণই নাকি প্রকৃত অভিনেতা। ভাইয়ের প্রশংসায় বরাবর উদার ছিলেন মহানায়ক। অভিনয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ, সমালোচনা— সবকিছুর মাঝেই ছিল এক অকৃত্রিম ভালবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।
তরুণ কুমার ছিলেন উত্তমের শীর্ষ সমালোচক। আর সেই কারণেই তাঁর মুম্বই সফরের সময়ও ভাইকে ভরসা করেছিলেন মহানায়ক। ১৯৮০ সালের ২২ জুলাই, একটি ছবির স্বত্ব কিনতে মুম্বই গিয়েছিলেন তরুণ কুমার। উত্তম কুমারের ‘প্লট নাম্বার ৫’ সিনেমাটি নিয়ে এক প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তির দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। ছবি দেখে ফিরে ফোন করেন উত্তমকে। উত্তম প্রশ্ন করেন, “বুড়ো, প্রযোজকের ছবিটা কেমন লাগল?”
ভাই বলেন, “ছবিটা অসাধারণ! তোমার অভিনয় মন কাড়বে সবার। এই ছবি বলিউডে ঝড় তুলবে। হিন্দি ছবি ফ্লপ হওয়ার সব দুঃখ ঘুচে যাবে তোমার।” উত্তম তখন কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে ভাইকে বলেন, “সত্যি বলছিস? জলদি ফিরে আয়, মুখোমুখি বসে সব শুনব।” শুটিংয়ের ব্যস্ততার মধ্যেও এই কথোপকথন যেন দুই ভাইয়ের আত্মিক বন্ধনের প্রমাণ। কিন্তু নিয়তির লিখন কে রোধ করতে পারে? সেই রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে তরুণ কুমারের ফ্লাইট দেরি হয়ে যায়।
ক্লান্ত শরীরে সোজা বাড়ি ফিরে যান তিনি, আর সেই রাতেই দাদার সঙ্গে দেখা আর হয়নি। পরদিন সকালেই আসে সেই হৃদয়বিদারক খবর— হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন উত্তম কুমার। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র সেট থেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তরুণ দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের বাইরে। চিকিৎসকদের ব্যস্ততা, কাঁচের জানলা দিয়ে দাদাকে অসহায় অবস্থায় দেখার মুহূর্ত— সবই যেন থমকে গিয়েছিল তরুণের জন্য।
আরও পড়ুনঃ শুটিং সেটেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা! ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’-এর শুটে মারাত্মক ক্ষতি হলো দৃষ্টিশক্তির! গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি স্বস্তিকা! কী হয়েছে অভিনেত্রীর?
হঠাৎ এক সময় ডাক পড়ল, উত্তমের জ্ঞান ফিরেছে। কষ্ট করে চোখ খুলে মহানায়ক বলেন, “বুড়ো, তুই এসে গেছিস!” তারপরই শেষ। এটাই ছিল দুই ভাইয়ের শেষ কথোপকথন। ২৪ জুলাই, কলকাতার আকাশে ছায়া নামিয়ে চলে গেলেন মহানায়ক। আর তরুণ কুমার আজীবন বয়ে বেড়ালেন এক অপরাধবোধ— “হয়তো সেদিন মুম্বই না গেলে, দাদাকে বাঁচাতে পারতাম!” এই বাস্তব গল্পে সম্পর্ক আর ভাগ্যের টানাপোড়েন মিশে গেছে এক অপূর্ব বিষাদে।