বাংলা টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ (Dance Bangla Dance) এই মুহূর্তে তীব্র সমালোচনার মুখে। বিশেষ করে শো-এর একটি পর্ব যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চণ্ডালিকা’ (Chandalika) নৃত্যনাট্যের আধারে পরিবেশিত নাচে হিন্দি সিনেমা ‘আঁধি’র গান ব্যবহৃত হওয়ায় দর্শক ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠেছে, রবীন্দ্র সাহিত্য ও বৌদ্ধ দর্শনের এমন এক গম্ভীর রচনায় হিন্দি গান মিশিয়ে কিভাবে এমন ‘ফিউশন’ (Fusion) পরিবেশন করা হল?
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন অভিনেত্রী ‘দেবলীনা দত্ত’ (Debolina Dutta) , যিনি ওই পর্বে ‘আনন্দ’ চরিত্রে অভিনয় এবং নাচ পরিবেশন করেন। তাঁর মাথা ন্যাড়া, গেরুয়া বসনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ছাপ, সবটাই ছিল চরিত্র অনুযায়ী সাজানো। কিন্তু আপত্তির মূল কেন্দ্র ছিল নৃত্যের ধরন ও গান নির্বাচনে। বিচারকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিলেও ‘যিশু সেনগুপ্ত’ (Jisshu Sengupta) বিশেষ কোনও মন্তব্য না করেই নীরবতা বজায় রাখেন, যা দর্শকের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে তোলে।
এবার এই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালেন অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তের দিদি ‘রাই সেনগুপ্ত’ (Rai Sengupta)। তিনি ভাইকে বাদ দিয়ে, সরাসরি দেবলীনার প্রতি কটাক্ষ ছুড়ে বলেন, দেবলীনার এই যুক্তিগুলি “অশিক্ষার নিদর্শন” ছাড়া আর কিছু নয়। রাইয়ের দাবি, দেবলীনা ও তাঁর প্রশিক্ষকদের বোঝারই অভাব রয়েছে ‘চণ্ডালিকা’র মতো সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে। রাই নিজের পোস্টে লেখেন, ‘এমন পরিবেশনার পেছনে শুধুই যুক্তির ভান, প্রকৃত জ্ঞান নেই।’
এদিকে দেবলীনার পাল্টা বক্তব্যও সামনে এসেছে। তিনি জানান, এর আগে তিনবার ‘চণ্ডালিকা’র ‘প্রকৃতি’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং রবীন্দ্রনাথের এই নৃত্যনাট্য তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। তাঁর দাবি, আনন্দ-প্রকৃতির সম্পর্ক কেবল নিষ্ঠার নয়, প্রেমের, যা রবীন্দ্রনাথ নিজে ‘পাগলের ভালোবাসা’ বলে প্রকাশ করেছিলেন। তাই এই আধুনিক ব্যাখ্যা ও ‘ফিউশন’ পরিবেশন নৃত্যনাট্যের ভাবকে বিকৃত করে না বরং নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করে।
আরও পড়ুনঃ শাশুড়ির মুখ ফসকে ফাঁস গয়না রহস্য! শেষমেশ রুখে দাঁড়াল কমলিনী, ‘অধরা মাধুরী’ ছাড়বে না সে! নতুনের হস্তক্ষেপে ভেস্তে গেল বর্ষা ও চন্দ্রদের দম্ভ! এবার থেকে নতুনের ভালো থাকার দায়িত্ব গ্রহণ কমলিনীর!
তবে দেবলীনার এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে মতবিরোধ প্রবল। একদিকে রয়েছে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও গবেষণার দাবি, অপরদিকে রয়েছে দর্শকের আবেগ এবং রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা। এরই মাঝে বিশিষ্ট অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ এই উপস্থাপনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। নেটদুনিয়ায় শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্কের ঝড়—কোনটা শিল্পের স্বাধীনতা আর কোনটা রুচিহীন উদ্ভাবন? উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।