“মেয়েদের যদি বাবা-দাদা কন্ডো’মের প্যাকেট আনতে বলে তাহলে কি সেটা ভালো লাগবে শুনতে?” “ছেলেরা স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ডকে কন্ডো’ম আনতে বলতে পারে?”— বিতর্কের কেন্দ্রে মমতা শঙ্করের ‘ব্যক্তিগত’ মত, পাল্টা যুক্তিতে সমালোচকদের জবাব দিলেন মৌসুমী!

ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড (Menstruation) এখনও এদেশে অনেকের কাছেই একটা অস্বস্তিকর আলোচনার বিষয়। আধুনিকতার ঢেউ যতই সমাজে বইতে থাকুক না কেন, বাস্তবে এখনও অনেকেই ঋতুমতী নারীদের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাপান। ঠিক এই বিষয়ে সদ্য বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এলেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar)। সম্প্রতি তাঁর একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক, যেখানে তিনি বলেন, ঋতুকালে কোনও মেয়ে যদি তার বাবা বা ছেলেকে স্যানিটারি প্যাড আনতে বলেন, তা লজ্জাজনক ব্যাপার। এই বক্তব্যকেই ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে সমাজমত।

এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী ‘মৌসুমী ভট্টাচার্য’ মমতা শঙ্করের বক্তব্যকে একেবারে উড়িয়ে না দিয়ে বরং বিষয়টিকে যুক্তির কাঠগড়ায় বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, কেউ কাউকে অপমান না করে যদি এই প্রসঙ্গে যুক্তি দিয়ে আলোচনা করে, তাহলে হয়তো বিতর্ক নয়, বরং নতুন করে ভাবার একটা দরজা খুলে যেতে পারে। মৌসুমী স্পষ্ট করেন, একটি মেয়ে যদি নিজের বাবাকে কিংবা একেবারে ছোট ছেলেকে প্যাড আনতে বলেন, তাহলে তাদের পক্ষেও বিষয়টি অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনও কখনও এমারজেন্সিতে অনেক কিছুই করতে হয়, এই সত্যটা তিনি অস্বীকার করেননি।

অভিনেত্রীর মতে, আমরা ছোটবেলা থেকেই এই সংবেদনশীল বিষয়গুলো মা বা দিদির সঙ্গেই আলোচনা করতে শিখি আমরা, ফলে সেই সামাজিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই অনেকের চিন্তাভাবনা গড়ে ওঠে। কেউ যদি সেই সংস্কারের ছাঁচে থেকে কথা বলেন, তাহলেও তাঁকে একেবারে প্রতিক্রিয়াশীল বলে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। মমতা শঙ্করের মতো একজন বুদ্ধিদীপ্ত শিল্পীর মন্তব্যের পেছনে যদি কিছু সামাজিক ক্লান্তি বা সংস্কারজনিত হতাশা থাকে, তবে সেটাকেও শোনা উচিত। তবে এও ঠিক, পরিবর্তন আনতে গেলে পুরনো মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি।

আজকের দিনে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলেরই উচিত শরীর সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হওয়া এবং লজ্জার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা। একজন পুরুষ যখন কন্ডোম কিনতে গিয়ে সংকোচ বোধ করেন, তখন সেটাও কিন্তু একই সমাজের এক অন্য প্রান্তের চিত্র। অভিনেত্রীর কথায়, “মেয়েদের যদি বাবা-দাদা কন্ডোমের প্যাকেট আনতে বলে তাহলে কি সেটা ভালো লাগবে শুনতে? আজকে একজন ছেলে তাঁর স্ত্রী অথবা বান্ধবীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চাইলে, সে তাঁর বাবা-মাকে বলতে পারবে, কন্ডোমটা কিনে দাও!” সুতরাং, সমাজ যখন মডার্ন হওয়ার দাবি তোলে, তখন এই সংবেদনশীল আলোচনাগুলিও সেই পরিবর্তনের অংশ হওয়া জরুরি।

আরও পড়ুনঃ “ওর ধৈর্য আর শিক্ষা যে কোনও পুরুষকে আকৃষ্ট করবে”— দিতিপ্রিয়াকে নিয়ে কেন এমন বললেন জিতু কমল?

সবশেষে মৌসুমী বলেন, “যতই মানুষ মডার্ন হয়ে যাক না কেন, নিজের সংস্কৃতিকে ভুললে চলবে না। মেয়েদের লজ্জা রাখতেই হবে, উলঙ্গ অবস্থায় ঘুরে বেড়ানো মডার্ন এর সংজ্ঞা নয়৷ আধুনিকতা মানুষকে অশিক্ষিত করছে৷” তাঁর কথায়– বিতর্ক নয়, প্রয়োজন বোধগম্যতা। কোনও মন্তব্যে আমরা দ্বিমত পোষণ করতেই পারি, কিন্তু তা যেন যুক্তির সীমা অতিক্রম না করে। একজন প্রবীণ শিল্পীকে ‘অশিক্ষিত’ বলে অপমান করে তাঁর অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনাকে একেবারে অস্বীকার করাও বোধহয় আমাদের শিক্ষার পরিচয় দেয় না।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।