“অভিনেতার একাধিক বান্ধবী থাকলে সে ‘লেডি কিলার’, কিন্তু অভিনেত্রীর পুরুষ বন্ধু থাকলেই সে হয়ে যায় ‘নষ্ট চরিত্রা’!” “‘লেডি কিলিং’ নাকি সুপারস্টারের ইউএসপি, সম্পর্ক ভাঙলেই দোষ চাপানো হয় নারীর উপর!”— দ্বিচারিতা নিয়ে বিস্ফোরক সুদীপ্তা, কটাক্ষ করে প্রশ্ন ছুঁড়লেন সমাজকে!

টলিউডের বাণিজ্যিক ছবির বাইরে যেসব ছবি মানুষকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করায়, তেমন ছবির শক্তিশালী অভিনেত্রীদের মধ্যে ‘সুদীপ্তা চক্রবর্তী’ (Sudipta Chakraborty) আজও অন্যতম। তাঁর অভিনয় জীবনের সূচনা হয়েছিল ‘বাড়িওয়ালি’ ছবির ‘মালতী’ চরিত্র দিয়ে। ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় তৈরি সেই ছবিই তাঁকে এনে দিয়েছিল জাতীয় পুরস্কার। সেই এক চরিত্রই সুদীপ্তাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল অন্যরকম মর্যাদা, আর দর্শকদের চোখে তাঁর নাম হয়ে উঠেছিল অভিনয়ের এক বড় ভরসা। দীর্ঘ সময় পরে আবারও এক পরিচারিকার চরিত্রে ‘আপিস’ ছবিতে ফিরে এসেছেন তিনি।

সৌদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ পরিচালিত এই ছবি তাঁর কেরিয়ারে এক নতুন সংযোজনের মতোই। টেলিভিশনের পর্দাতেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়। বর্তমানে সান বাংলার চর্চিত রিয়্যালিটি শো— ‘লাখ টাকার লক্ষী লাভ’-এর সঞ্চালক হিসেবে তাঁর উপস্থিতি দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলছে। কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা এবং বহুমুখী প্রতিভাই তাঁকে করে তুলেছে দর্শকপ্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি পেশার বাইরেও আলোচনায় উঠে এসেছেন এই অভিনেত্রী, কারণ তিনি সমাজের প্রচলিত ভণ্ডামি নিয়ে খোলাখুলি মত প্রকাশ করেছেন।

এক সাক্ষাৎকারে সুদীপ্তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন নারী-পুরুষের প্রতি ভিন্ন সামাজিক মানসিকতার বিষয়টি। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, “একজন পুরুষ অভিনেতার একাধিক মহিলা বান্ধবী থাকলে তাঁকে তথাকথিত ‘লেডি কিলার’ বলে প্রচার করা হয়। বড় বড় টেলিভিশন চ্যানেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বা আরও বেশি সময় ধরে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেখানে বলা হয় ‘লেডি কিলিং হচ্ছে এই সুপারস্টারের ইউএসপি’। কিন্তু অন্যদিকে একজন মহিলা অভিনেত্রীর যদি একাধিক পুরুষ বন্ধু থাকে, তখন সে হয়ে যায় ‘নষ্ট চরিত্রা’!

বর্তমান সম্পর্ক ভাঙলে পুরুষ বন্ধুদের দোষ দেওয়া হয়, ব্যক্তিগত জীবনে অশান্ত থাকলেও পুরুষ বন্ধুদের দোষ দেওয়া হয়। এমন দ্বিচারিতাই বারবার সমাজকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে!” তাঁর এই বক্তব্য নিছক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে নয়, বরং বর্তমান সমাজব্যবস্থার এক গভীর অসঙ্গতি প্রকাশ করেছে। যেখানে পুরুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে গৌরবের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়, সেখানে মহিলাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় প্রথমেই। সমাজের এই দ্বিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি কেবল শিল্পী মহলেই নয়, সাধারণ মানুষের জীবনেও প্রতিফলিত হয়।

আরও পড়ুনঃ “উত্তমকুমারের মৃ’ত্যুর পর সিনেমাহলে তালা পড়েছিল, আমি-তাপস জুটিই আবার টেনেছিলাম দর্শককে!” “আমাদের ‘দাদার কীর্তি’ই মানুষকে বাংলা ছবির নতুন স্বাদ দিয়েছিল!”— দেবশ্রীর দাবি ঘিরে বিতর্ক! মহানায়কের সঙ্গে তুলনা নিয়ে অভিনেত্রীকে কটাক্ষ সমাজ মাধ্যমে!

সুদীপ্তার মন্তব্য তাই শিল্পীর জীবনের সীমানা পেরিয়ে এক বড় সামাজিক প্রশ্ন ছুঁয়ে দিয়েছে। অভিনেত্রীর এই স্পষ্টভাষী মতামত ইতিমধ্যেই ভক্তদের মধ্যে আলোড়ন ফেলেছে। অনেকেই তাঁর সাহসী মনোভাবকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন, আবার অনেকে সমালোচনাও করছেন। তবে এটুকু নিশ্চিত, সুদীপ্তা চক্রবর্তীর বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভিন্নভাবে চিন্তা করার খোরাক জুগিয়েছে। সমাজে নারী-পুরুষকে একই চোখে দেখার দাবি নতুন কিছু নয়, কিন্তু তাঁর মতো শক্তিশালী শিল্পীর কণ্ঠে এই দাবি আরও জোরদার হয়ে পৌঁছেছে বৃহত্তর মহলে।