সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায় মাতৃত্বের প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। বেবি বাম্পের ছবি থেকে শুরু করে সাধভক্ষণ—সব কিছুই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু শুক্রবার সেই আনন্দ হঠাৎই থেমে যায়। জানা যায়, প্রসবের আগেই মারা যায় তাঁর সন্তান। এই ঘটনার পরই পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যেখানে এক মহিলা নিজেকে সোহিনীর ননদ পরিচয় দিয়ে সরাসরি চিকিৎসককে দায়ী করেন। এর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসককে নিয়ে কটূক্তি শুরু হয়।
অভিযোগের জবাব দিতে অবশেষে মুখ খুললেন চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথ দাস ওরফে এসএন দাস। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, সোহিনীর বয়স কিছুটা বেশি ছিল, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও ছিল, আর শিশুর ওজন ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। শুক্রবার সকালে সোহিনীর পরিবার তাঁকে ফোন করে জানায়, বাচ্চা নড়ছে না। দ্রুত পরীক্ষার পর তিনি বুঝতে পারেন, শিশুর হার্টবিট নেই। তখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন তিনি। যদিও পরিবারের দাবি ছিল, বাইরে করা এক আল্ট্রাসাউন্ডে সব ঠিক আছে। তবুও তিনি ভর্তি হতে জোর দেন।
চিকিৎসকের কথায়, তিনি নিজে ও তাঁর টিম একাধিকবার পরীক্ষা করে দেখেন, শিশুর হৃদস্পন্দন নেই। এর পর পরিবারকে জানানো হয়, এবং অন্য সোনোলজিস্টের কাছে রিপোর্ট করানোর পরও একই ফল মেলে। অভিযোগ, এই সময় হাসপাতাল ও তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও হেনস্থার চেষ্টা করা হয়। পরিবারের প্রশ্ন ছিল, সঙ্গে সঙ্গে সিজার না করার কারণ কী। এ বিষয়ে ডাঃ দাস বলেন, “শিশু যখন মৃত, তখন সিজার করার কোনও মানে হয় না। তাতে মায়ের উপর অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি হত।”
অবশেষে রাতের দিকে তিনি সিজার করেন, কারণ তিনি মায়ের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। অস্ত্রোপচারে বেরিয়ে আসে আসল কারণ—সোহিনীর পেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘কনসিল্ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’ বলা হয়। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ ও বয়সজনিত কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সিজার সাফল্যের সঙ্গে হয়, এবং সোহিনী সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরে তাঁকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এসএন দাসের দাবি, “আমার কোনও গাফিলতি ছিল না। ভর্তি হওয়ার পর থেকে শিশুর হার্টবিট পাওয়া যায়নি। এমনকি অস্ত্রোপচারের জন্য আমি কোনও ফি নিইনি। মা হওয়ার আগে সন্তান হারানো ভীষণ কষ্টের, সেটা আমি বুঝি। কিন্তু না জেনে দোষারোপ করা অন্যায়।” এ ঘটনায় সোহিনী বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি।