অভিনয় জগতে পা রাখা থেকেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসেন। কেউ অমুক অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করতে চান তো আবার কেউ তমুক পরিচালকের ছবির নায়িকা হতে চান। অনেকের সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ঠিকই, কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। এই প্রসঙ্গেই টলিপাড়ার পরিচিত মুখ ‘মৈত্রেয়ী মিত্র’ (Maitryee Mitra) এবার অকপটে জানালেন নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর মতে, একজন অভিনেত্রী হয়েও সবসময় বিলাসী জীবনযাপন বা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। বরং জীবনের প্রাপ্তি নিয়ে সোজাসুজি হিসেব করতেই ভালবাসেন।
যেটা পাননি সেটা নিয়ে দুঃখ নয়, যেটা পেয়েছেন সেটাই আনন্দের কারণ তাঁর কাছে। উত্তর কলকাতার সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়েও অভিনয়ে জগতে এতটুকু জায়গা করে নেওয়া তাঁর কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি। তাঁর কথায়, “আমি যদি প্রতিদিনই শুধু কী পেলাম না, সেটা নিয়ে হিসেব করতে থাকি, তাহলে একদিনও হয়তো শান্তি পাব না জীবনে।” অভিনেত্রী ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, দুই জগতেই নিজের ছাপ রেখেছেন। একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকের পাশাপাশি অনেক উল্লেখযোগ্য ছবিতেও অভিনয় করেছেন মৈত্রেয়ী। অভিনেত্রীর মতে, তাঁর জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা ‘আলো’ ছবিতে কাজ করতে পারে।
ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল তাঁর। ‘দাদার কীর্তি’ ছবিটি মৈত্রীর মনে আলাদা চাপ ফেলেছিল। তিনি এরপর থেকেই তেমন ছবিতে অভিনয় করতে চাইতেন। শুরুর দিকে ‘তপন সিনহা’, ‘অসিত সেন’দের ছবিতেও কাজ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পরবর্তীতে কিছুটা হলেও ‘আলো’ ছবির চরিত্রের মাধ্যমে সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হয়েছে। তবু মনের ভেতরে রয়ে গেছে কিছু আক্ষেপ, যেগুলো এতদিন বাদে খোলাখুলি ভাগ করে নিলেন। অভিনেত্রীর সবচেয়ে বেশি অভিমান জমে আছে ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে। মৈত্রেয়ী জানিয়েছেন, একসময় ‘আলো’ ছবির কাজের রেফারেন্স দিয়ে তাঁকে ‘অন্দরমহল’ ছবির জন্য ডাকা হয়েছিল।
কিন্তু তাঁর কাছে যে চরিত্রটি প্রস্তাব আসে, তা ছিল একেবারেই গৌণ ও আউট অফ ফোকাসে থাকা চরিত্র। বিশেষ করে যখন ‘আলো’ ছবির অভিনেত্রী হিসেবে তাঁকে ডাকা হয়েছিল এমন একটি চরিত্রে, তখন ওই প্রস্তাবকে তিনি অপমানজনক বলে মনে করেছিলেন। তাঁর কথা, ‘আলো’তে তিনি যে চরিত্রটা করেছিলেন, সেটা মূল চরিত্রের কাছাকাছি। তাই সেই ছবির অভিনেত্রী হিসেবে যখন তাকে ডাকা হচ্ছে, তখন চরিত্রের মানটাও তেমনই হওয়া উচিত। মৈত্রীর ভাষায়, “ওই ছবির নাম উল্লেখ না করলে আমার এতটা খারাপ লাগতো না। যেহেতু তুলনা টানা হয়েছে আমার অপমানিত বোধ হয়েছে।”
আরও পড়ুনঃ আকস্মিকভাবে প্র’য়াত কণ্ঠশিল্পী জুবিন গর্গ! সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েই ঘটে গেল মর্মা’ন্তিক দুর্ঘ’টনা, চিরবিদায় নিলেন সবার প্রিয় গায়ক!
এই কারণে তিনি সেই সিনেমায় কাজ করেননি। যদিও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তাঁর কোনও আফসোস নেই। এরপরেও দুটি টেলিফিল্মের অফারও নানা কারণে হ্যাঁ করতে পারেননি তিনি। এত সুযোগ হাতছাড়া হওয়া সত্ত্বেও মৈত্রেয়ী তিক্ত হয়ে থাকেননি। মৈত্রেয়ী মিত্রের এই খোলামেলা বক্তব্যে প্রমাণ করেছেন, সাফল্য কেবল বড় বড় চরিত্রে নয়, বরং প্রতিটি অভিজ্ঞতার ভেতর লুকিয়ে থাকে। নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা আর ব্যক্তিগত জীবনে পরিতৃপ্তিই আজ তাঁকে শান্তি দেয়। তাই যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রী সবসময় আরও পাওয়ার স্বপ্নে ছুটে চলেন, তাঁদের থেকে আলাদা হয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন খুশি থাকার সহজ পথ।