“প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দাম্ভিক ছিলেন, ওরাই রাজ্যটার বেহাল দশা করেছে!” “মমতার উপর আস্থা আর শাসক পরিবর্তনের স্বার্থেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম, এবার সন্ন্যাস নেব!”— অকপট চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী! অতীত স্মৃতি উসকে তোপ দাগলেন, ফের কী জড়ালেন বিতর্কে?

আটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা দীপক চক্রবর্তী ওরফে ‘চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী’ (Chiranjeet Chakraborty) আজও দর্শকদের অন্যতম পছন্দের একজন। কখনও রোম্যান্টিক হিরো, আবার কখনও ভিলেনের সঙ্গে লড়াই করে হয়ে উঠেছেন সবার আইডল। পরবর্তীতে রাজনীতির ময়দানে পা রেখেও বারাসতের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন টানা তিনবার। তবে এত সাফল্য সত্ত্বেও এখন তিনি মনে করছেন সময় এসেছে দায়িত্ব ছেড়ে নিজের মতো বাঁচার।

চিরঞ্জিৎ জানিয়েছেন, শুরু থেকেই রাজনীতি তাঁর নেশা ছিল না। সিনেমার মানুষ হিসেবেই তিনি নিজেকে দেখতে চেয়েছিলেন। অথচ পরিস্থিতি, দলের অনুরোধ এবং সময়ের দাবি তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে টেনে এনেছিল। প্রথমবার প্রার্থী হওয়ার সময়ে তিনি মনে করেছিলেন, শাসক পরিবর্তন রাজ্যের জন্য জরুরি, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আস্থা তাঁকে ভোটের ময়দানে দাঁড়াতে বাধ্য করে। সে কারণেই সেলিব্রিটি মুখ হিসেবে তিনি আসন জিতেছিলেন।

তবে অভিনেতার দাবি, এটি ছিল দায়িত্ববোধ, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়। চিরঞ্জিৎ খোলাখুলি বলছেন, তিনি বরাবরই সিপিএমকে পছন্দ করতেন না, কারণ তাঁদের ক্ষমতালোভী মানসিকতা তাঁকে হতাশ করেছিল। এমনকি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ নিয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন। অতীতের সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করলেও, সক্রিয় রাজনীতি যে তাঁর জায়গা নয়, সেটা তিনি আবারও জানিয়েছেন। তাঁর নিজের ভাষায়, “প্রথম থেকেই আমার বাংলার প্রাক্তন শাসকদলকে পছন্দ ছিল না।

সিপিআইএম নেতারা ক্ষমতা ভোগ করতে করতে দাম্ভিক হয়ে পড়েছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মোটেও খুব ভালো একজন ছিলেন না, উল্টে খুবই দাম্ভিক আচরণ করতেন। আজকে বলে নয়, ওদের সময় থেকেই যাদবপুর নকশা’লপন্থী হয়ে উঠেছিল। আমি প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে সেই সময় দাঁড়িয়ে, সুপারকে মা’র্ডার হতে দেখেছি চোখের সামনে ওদের হাতে।” অভিনেতা আরও যোগ করেন, “সেলিব্রিটি হিসেবে তৃণমূলের কিছু মিটিং বা সমাবেশে গেছিলাম। আবার বক্তব্যও রেখেছি বাকিদের মতো, সেগুলো মানুষের পছন্দ হয়েছে।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও তখন জেতার জন্য ২০০টার মতো আসনের প্রয়োজন ছিল। উনি অনুরোধ করেছিলেন আমি দাঁড়ানো মানে একটা আসন ওনার পাকা। আমি চেয়েছিলাম রাজ্যের স্বার্থে শাসকদলের পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চাইনি। শুধুমাত্র শাসক দল পরিবর্তন হবে আর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমার পূর্ণ আস্থা থাকায়, সেবার ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। তার পরেরবার ভোটের আগে আমি অনুরোধ করেছিলাম, আমাকে যেন বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ “হাতে টাকা নেই, এবার পুজোতে একটা সুতোও কেনা হয়নি!”— অভিনয় জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়েও চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছে তনিমা সেনের! কাজ হারিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী!

যেই স্বার্থে আমি দাঁড়িয়েছিলাম সেটা পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন আর আমার থাকার প্রয়োজন নেই, তবুও মাননীয়া ছাড়তে চাইলেন না। সামনে আবার ভোট, আমি বলেছি এখন দেখা যাক কি হয়।” রাজনীতিতে এসে অবশ্য চিরঞ্জিৎ নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন, কেউ আবার দূরে সরে গিয়েছেন। দলের ভেতরের চাপ, প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই এবং মানুষের প্রত্যাশা— সব মিলিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে এই পথ তাঁর জন্য না। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি সাফ বলেছেন, “আমার কাজ অভিনয়, রাজনীতি না।”