“অসুরেরা আজও আছে, শাস্তি এমন হোক যাতে আত্মা কেঁপে ওঠে!” “কুকুর নয়, ধর্ষ’করা ভয়ংকর…ওদের র‍্যাফ তুলে নিলে, ধর্ষ’কদের কেন নয়?” “এক হাতে অসুর নিধন, অন্য হাতে মমতা নিয়েই প্রকৃত দুর্গা!”— পুজোর প্রাক্কালে বিস্ফো’রক মিমি চক্রবর্তী!

দুর্গা পুজো মানেই নতুন করে আলোর সঞ্চার, নারীশক্তির আরাধনা। তবে এই পবিত্র সময়েও সমাজের অন্ধকার দিকগুলোকে অস্বীকার করা যায় না। টলি অভিনেত্রী তথা প্রাক্তন সাংসদ ‘মিমি চক্রবর্তী’র (Mimi Chakraborty) চোখে মা দুর্গা শুধুই এক পৌরাণিক চরিত্র নন, বরং নারীর এক এমন রূপ– যিনি সাহস, সহানুভূতি আর লড়াইয়ের প্রতীক। মা দুর্গার প্রতিটি অস্ত্র যেন এক একটি সামাজিক বার্তা বহন করে। ‘কালদণ্ড’ যেমন শুধুই এক গদা নয়, বরং ভালবাসা, আনুগত্য এবং ন্যায়ের প্রতীক। আজ স্বয়ং মা দুর্গা থাকলে কী করতেন?

মিমির কথায় উঠে এসেছে আজকের সমাজ নিয়ে এক গভীর অসন্তোষ। নারীশক্তির আরাধনার পাশাপাশি ধর্ষ’ণের মতো নৃ’শংস অপরাধ এখনও সমাজে অব্যাহত। যেখানে একদিকে দেবী দুর্গার বন্দনায় মেতে ওঠে সবাই, সেখানে অন্যদিকে মহিলারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিচার পেতে বছরের পর বছর কেটে যায়। মিমির মতে তাই, “পৃথিবীর অন্য দেশ সুরক্ষিত, তারা যেমন অপরাধীদের নির্মম শাস্তি দেয়, আমাদের দেশেও তেমন করা উচিত। শাস্তি ঠিক কেমন হতে পারে, সেটা চোখের সামনে অপরাধীরা দেখুক।”

মিমি চান সমাজে এমন উদাহরণ তৈরি হোক যেখানে অপরাধী আর সহজে রেহাই না পায়। এক হাতে অসুর নিধন আর অন্য হাতে মমতা, অভিনেত্রী কথায় এই দুই বিপরীত শক্তির ভারসাম্যই মা দুর্গার প্রকৃত রূপ। তাঁর কথায় উঠে এসেছে আরও এক সমসাময়িক বিষয়, যেটাকে একদম ফেলে দেওয়া যায় না। সম্প্রতি অবলা কুকুরদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি, কুকুরদের র‍্যাফ নামিয়ে আটক করার ঘটনায় মিমি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথা, “এই যে দেশের শীর্ষ আদালত মনে করল যে, কুকুরেরা ভয়ের কারণ, এটা কী করে হল?”

এখানেই তিনি তুলনা টেনেছেন ধর্ষ’কদের সাথে– যারা দিব্যি জামিনে মুক্ত, অথচ কথা বলতে না পারা প্রাণীদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। অভিনেত্রীর কথায়, “তা হলে এই ধর্ষ’ক, খু’নিরা, যারা মেয়েদের মে’রে ফেলছে, ধর্ষ’ণ করছে, চাইলে তাদেরও র‍্যাফ নামিয়ে তুলে নিতে পারেন না মা দুর্গা!” মিমির নিজের অভিজ্ঞতাও এই প্রতিবাদের পেছনে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজে কুকুরদের স্টেরিলাইজেশন এবং ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করেন, কিন্তু সেটা তো তাঁর কাজ নয়। প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েও তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেন।

আরও পড়ুনঃ “আমি কখনও মা হতে পারিনি, সেই আক্ষেপ আমার গোটা জীবনের!” স্বামীর শেষ নিঃশ্বাস থেকে বৃদ্ধ বাবা-মার যত্ন নেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের জীবনের শূন্যতা জয় করেছেন অভিনেত্রী! 

তাঁর দাবী, “যখন এটা সরকারের কর্তব্য, তখন একজন সাধারণ মানুষ কেন এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবে? নাগরিকদের উপর দায় চাপিয়ে, গা-ছাড়া মনোভাব প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলতে পারে না। আমি যেমন মনে করি যে, সন্তান যদি অশিক্ষিত হয়, তার দায় শুধু সন্তানের নয়, অভিভাবকেরও। সমাজে যেন প্রতিটি নারী দুর্গার মতো সাহসী হয়ে উঠুক, এটাই প্রার্থনা। দুর্গাশক্তি যেন কেবল মূর্তিতে সীমাবদ্ধ না থাকে। বাস্তবের নারীজীবনেও প্রতিফলিত হোক। অসুরেরা শুধুই পুরাণে নেই, তারা আজকের সমাজে আছে বলেই, প্রতিরোধের এই মনোভাব জরুরি।”