“আজকের প্রজন্ম পাশ্চাত্যমুখী, রক গানে ডুবে আছে আর বাংলা গানেও সেই ছায়া খোঁজে!” “এখন শিল্পীদের ঘোর দুর্দিন, প্রচুর লড়তে হচ্ছে!”— নতুন বাংলা গান নিয়ে হতাশ অন্তরা চৌধুরী! শিশুকণ্ঠে ‘বুলবুল পাখি ময়না টিয়ে’ আজও সমান জনপ্রিয়, নতুন প্রজন্মে বাংলা উচ্চারণ হারাচ্ছে বলে ক্ষোভ তাঁর!

আজও যেই গান শুনলে শৈশবের দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মনে আছে ‘বুলবুল পাখি ময়না টিয়ে’ গানের কথা? ১৯৪০ সালের সেই গান আজও জনপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিকতাও হারায়নি। যাঁর গলায় গাওয়া এই গান আজও ছুঁয়ে যায় দর্শকদের হৃদয়, তিনি হলেন ‘অন্তরা চৌধুরী’ (Antara Chowdhury)। তাঁর সঙ্গীতযাত্রা শুরু হয়েছিল খুব অল্প বয়সে। মাত্র সাত বছর বয়সেই পুজোর প্রথম রেকর্ডে সলিল চৌধুরীর লেখনীতে কণ্ঠ দেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গানের জগতে তাঁর পথচলা দীর্ঘ হয়েছে, তৈরি হয়েছে অসংখ্য স্মৃতি।

দীর্ঘদিন বিরতির পর, সম্প্রতিক তিনি আবারও নতুন গান গেয়েছেন। যদিও তা পুজোর জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দিবস উপলক্ষে। সুদীপ্ত চন্দের কথায় ও সুরে তৈরি গান ‘দূর অজানায়’ মানুষের মনে ভ্রমণের তাগিদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। আর এই গানে সঙ্গীতায়োজন করেছেন প্রয়াত সুধীন দাশগুপ্তের ছেলে সৌম্য দাশগুপ্ত, যিনি ভিন্ন পেশা ছেড়ে সঙ্গীতে পা রাখলেন এই কাজ দিয়েই। তবে অন্তরার কাছে পুজোর গান মানে এক অন্য রকম আবেগ। একসময় বাবার হাত ধরেই তিনি ‘এমন সঘন গহন বর্ষায় তুমি’ কিংবা ‘ও ভোলা মন’-এর মতো গান গেয়েছিলেন।

কিন্তু বাবার মৃ’ত্যুর পর সেই ধারাবাহিকতা আর বজায় থাকেনি। মাঝে লতা মঙ্গেশকর কিংবা সবিতা চৌধুরীর গান করলেও, পুজোয় নতুন গানের অভ্যাস আর গড়ে ওঠেনি। তাই আজও তিনি আগের সময়কে ভীষণভাবে মনে করেন, মিস করেন। তাঁর মতে, শ্রোতাদের অভ্যাসেও এসেছে বড় পরিবর্তন। আগে মানুষ গান শুনতে ভালোবাসতেন, এখন গানকে চোখ দিয়ে দেখার প্রবণতাই বেশি। রেকর্ড বা ক্যাসেট প্রকাশের দিন ফুরিয়ে গিয়ে এসেছে মিউজিক ভিডিওর দুনিয়া। শিল্পীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও তাই চিন্তিত তিনি।

অতীতে যেখানে একটি গানই একজন শিল্পীকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারত, এখন সেই সম্ভাবনা কার্যত নেই। গানের ভিড়ে ভালো কাজ হারিয়ে যাচ্ছে— এটাই তাঁর বড় দুঃখ। অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেকটাই বদলেছে সবকিছু। আগে ক্যাসেট বা রেকর্ড বিক্রি হলে শিল্পীরা সেখান থেকে উপার্জন করতেন। এখন ইউটিউব কিংবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গান ফ্রি-তেই শুনে নিচ্ছেন শ্রোতারা। শিল্পীদের হাতে ভরসা থাকছে কেবল মঞ্চানুষ্ঠান। তাই গানের সঙ্গে যুদ্ধও বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ। কতজন মানুষ সমাজ মাধ্যমে অনুসরণ করছেন, সেটাই আজ শিল্পীর মূল্যায়নের মাপকাঠি।

আরও পড়ুনঃ অভিমান ভুলে শুভেচ্ছা! জন্মদিনে সায়ককে ভাই বলে ডাকলেন সুস্মিতা!অভিনেতার সঙ্গে ভাইফোঁটার ছবি পোস্ট করে বিশেষ বার্তা ‘কুটনি বৌদি’র! তবে কি এবার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে? কুটনি বৌদি কি আবার ফিরছেন আগের জায়গায়? জল্পনা তুঙ্গে নেটপাড়ায়!

অন্তরার আফসোস এখানেই শেষ নয়। তিনি মনে করেন, আজকের প্রজন্ম পাশ্চাত্য প্রভাবের মধ্যে বেশি ডুবে আছে। বাংলা গান গাইলেও সেখানে রক বা পশ্চিমা ছোঁয়া খোঁজে অনেকে। এমনকি বাংলা শব্দ উচ্চারণেও হারিয়ে যাচ্ছে স্পষ্টতা। তিনি মনে করেন, এই ধারার পরিবর্তন শুধু সঙ্গীতের আঙ্গিক নয়, বাংলার সঙ্গীত সংস্কৃতির শিকড়কেও দুর্বল করে দিচ্ছে। তবু তাঁর আশা, ভাল কাজ করলে একদিন আবার বাংলা গান তার আসল জায়গা ফিরে পাবে।