“মঞ্চে অভিনয়ে করেই যদি ভাত-ডাল জোটাতে পারতাম, তাহলে এটা করতাম না!”—ঘাড়ে তীব্র ঋণের বোঝা, এদিকে কর্মহীন! দু’বেলা ঠিক করে দু’মুঠো ভাত খেতে না পেয়ে অবশেষে কী সিদ্ধান্ত নিলেন অভিনেতা সত্যম মজুমদার?

বিনোদন জগতে বহু চেনা মুখ রয়েছেন, যাঁদের আমরা নিয়মিত পর্দায় দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু সেই চেনা মুখগুলোর ভেতরকার সংগ্রাম আমরা ক’জনই বা বুঝি! ঠিক এমনই একজন শিল্পী ‘সত্যম মজুমদার’ (Satyam Majumder), যিনি বছরের পর বছর ধরে ছোটপর্দা, বড়পর্দা, মঞ্চ কিংবা ওয়েব সিরিজে একের পর এক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন। শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছে ‘জগদ্ধাত্রী’ ধারাবাহিকে, পুলিশ অফিসারের চরিত্রে। আবার অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করে, হিন্দি ছবিতেও তিনি রেখেছেন নিজস্ব ছাপ।

এই বহুমুখী অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও আজ তিনি কাজের খোঁজে সমাজ মাধ্যমে হাত পাততে বাধ্য হয়েছেন। চোখে পড়ার মতো প্রতিভা থাকা পরেও কাজের ধারাবাহিকতা আজকের দিনে অনেক শিল্পীর জীবনেই অনিশ্চিত। সত্যম মজুমদার সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে যে ভাষায় নিজের হতাশা প্রকাশ করেছেন, তা যেন শুধু তাঁর নয়, বরং সেই সব শিল্পীর মনের কথাও। তিনি লিখেছেন, “এক এক সময় ভাবি এইভাবে কাজ চেয়ে নিজের গুরুত্ব কমাবো না…” তিনি আরও অভিনয় করতে চান, চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা করতে চান, কিন্তু সুযোগ কোথায়?

Satyam Majumder, Bengali actor, Tollywood, Television Serials, Bengali Cinema, Acting Career, Job Insecurity, Social Media Post, Veteran Actor, Struggling Artist, Opportunity, Emotional Appeal, সত্যম মজুমদার, বাঙালি অভিনেতা, টলিউড, বাংলা ধারাবাহিক, বাংলা সিনেমা, অভিনয় জীবন, সুযোগের অপেক্ষা, কর্মসংকট, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, অনিশ্চিতা, অভিজ্ঞ অভিনেতা, মানবিক আবেদন

এই মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি, নিয়মিত কাজ করার পরেও হঠাৎ করে থমকে গিয়েছে সবকিছু। ‘জগদ্ধাত্রী’ ধারাবাহিকে টানা আড়াই বছর কাজ করার পর এখন সেই ধারাবাহিকেই তাঁর চরিত্রর প্রয়োজন ফুরিয়েছে, অথচ সংসার থেমে থাকে না। প্রতিমাসে ১৪ হাজার ঋণের কিস্তি, দৈনন্দিন খরচ, বিদ্যুতের বিল— এসবের সামনে শুধু ভালোবাসা দিয়ে শিল্প টিকিয়ে রাখা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, সত্যম মজুমদার শুধু অভিনয় করেন না, অভিনয়ের প্রতি একান্তভাবে দায়বদ্ধ।

মঞ্চের মানুষ তিনি-সেখানে এখনও নিয়মিত কাজ করেন। কিন্তু শিল্পের এই মাধ্যম তো আর পেট চালায় না। তিনি নিজেই বলেছেন, “মঞ্চে অভিনয়ে করেই যদি ভাত-ডাল জোটাতে পারতাম, তাহলে অন্য কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হত না।” অনেক প্রোগ্রামার, পরিচালক, প্রযোজকের কাছে হাত পেতেছেন তিনি, কিন্তু কাজ মেলেনি। তবুও অপেক্ষা করছেন, কারণ আশা এখনও শেষ হয়নি। তাঁর চোখে এখনো জ্বলজ্বল করে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। তিনি জানিয়েছেন, ছেলে সব কাজে ঢুকেছে। তাঁর উপর সংসারের চাপ সৃষ্টি করতে চান না তিনি।

আরও পড়ুনঃ “ঘরে একা বসে কাঁদতাম, আমার মেয়েটা আর সেই আগের মতো নেই!” “যাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি, সে আমার পাশে ছিল না!” “বাবার সঙ্গে আমার মেয়ের কিশোরীটা হারিয়ে গেল!”— জীবনের এক নিঃসঙ্গ অধ্যায়ে দাঁড়িয়ে অকপট সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়!

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে সত্যম একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমানে যখন অভিনয়ের নিরবচ্ছিন্নতা নেই, তখন অন্য পথ খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। জানা গেছে, অভিনয়ের বিকল্প হিসেবে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরির চেষ্টা করছেন। যদিও সেটা তাঁর স্বপ্নের পেশা নয়, কিন্তু সংসার চালানোর দায় তাঁকে এই বাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। একজন শিল্পীর পক্ষে এটা যেমন কষ্টের, তেমনি সাহসেরও-কারণ তিনি হাল ছাড়েননি, লড়াইটা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই লড়াই যেন আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়, পর্দার বাইরেও একজন শিল্পীর জীবন কতটা বাস্তব, কতটা সংগ্রামী।