টলিউডের ছোট থেকে বড়পর্দায় আজ যাঁকে আমরা দেখি খল চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করতে, তাঁর পথটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। অভিনেতা ‘সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়’ (Sagnik Chatterjee), নামটা আজ অনেকের কাছেই পরিচিত হলেও, এই জায়গায় পৌঁছাতে তাঁকে নিতে হয়েছে এক কঠিন সিদ্ধান্ত। বড় ব্যবসায়ীর ছেলে হয়ে বাবার ব্যবসার হাল ধরার কথা ছিল তাঁর, কিন্তু ছোট থেকেই মনে ছিল একটাই স্বপ্ন—হিরো হওয়ার। সেই স্বপ্নের রাস্তাটা খুব মসৃণ ছিল না, পড়াশোনা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অভিনয়ের পেছনে ছুটেছিলেন তিনি।
তাঁর মধ্যে একরকম একগুঁয়েমি ছিল, আর ছিল অনুপ্রেরণা মিঠুন চক্রবর্তীর মতো হওয়ার। আর ঠিক সেই জেদটাই তাঁকে আজ এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সিনেমা হোক কিংবা ধারাবাহিক, সাগ্নিকের মধ্যে যে চরিত্রে মিশে যাওয়ার একটা সহজাত ক্ষমতা আছে, সেটা বহুবার প্রমাণ হয়েছে। কখনও দাপুটে খলনায়ক, তো কখনও একেবারে সাধারণ মানুষ— প্রত্যেকটা চরিত্রেই নিজের ছাপ রেখে যান তিনি। অভিনয়টা তাঁর কাছে শুধু পেশা নয়, বরং একটা আত্মীয়তার জায়গা, যেটার টানেই সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ‘একেন বেনারসে বিভীষিকা’ ছবিতে তাঁকে দেখা গেছে, পাশাপাশি ধারাবাহিকেও তাঁর উপস্থিতি নজর কাড়ছে দর্শকের। সম্প্রতি তিনি ভাগ করে নিয়েছেন, অভিনয় শুরুর দিনের কিছু কথা যা আজও ভাবলে খারাপ লাগে তাঁর। তিনি বলেন, “অভিনয় করার স্বপ্ন নিয়ে প্রয়দিন স্টুডিও পাড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। বয়স কম, সাজগোজও ছিল তেমনই। অনেকদিন লক্ষ্য করার পর, একদিন হরনাথ চক্রবর্তী আমায় ডাকলেন। বললেন, ‘ও ভাই, তুমি রোজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো কেন?’
কাছে গিয়ে বললাম আমি অভিনয় করতে চাই। উনি জিজ্ঞেস করলেন কেমন? আমি তখন ইংরেজীতে উত্তর দিলাম যে, হিরো হতে চাই! উনি সব আশা শেষ করে দিয়ে বললেন, ‘তুমি হিরো হতে পারবে না। চুল নেই, গেল নেই, পেট নেই, রঙও ফর্সা না— এরমভাবে হয় না। আবার কানে দুল পরে আছো, ব্লাউজ ছাড়া কিছুই তো পরতে দেখি না তোমায়!’ আমি অবাক হয়ে গেলাম, যে কি বলছেন উনি? পরে বুঝলাম যে, আমি স্কিনফিট জামা পরতাম আর বলে ব্লাউজ বলেছেন।
আরও পড়ুনঃ ‘রোজ একটা গান না গাইলে রাতে ঘুম আসে না!’ হতে চেয়েছিলেন মঞ্চের গায়ক আজও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আলো ছড়াচ্ছেন ৮১ বছরের ইন্দুভূষণ রায়! টেলিভিশনের জনপ্রিয় পুরোহিতের জীবনের গল্প জানেন?
আসলে তখন হিরো হতে গেলে বডি বিল্ডিং, কানে দুল, ছোট চুল বা তীক্ষ্ণ চোয়াল— চলতো না। তারপর বাধ্য হয়েই ওনাকে অন্য চরিত্রের জন্য অনুরোধ করলাম। তারপর ওনার বেশকিছু ছবিতে ভিলেনের চ্যালা হতাম। মানে হিরো হতে চেয়েছিলাম কিন্তু হিরোর কাছে মার খেয়েছি শেষ পর্যন্ত!” সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “অভিনেতার পরিচয় হচ্ছে তাঁর অভিনয় করার দক্ষতায়। বয়স দিয়ে মাপা হবে কেন? শুধু পার্শ্ব চরিত্রের বয়স দেখা হয়, এদিকে হিরোরা ৬০ বছরে এসেও ২০ বছরের মেয়ের সঙ্গে নেচে যাচ্ছে!”