“রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে খারাপ, কোয়েল কিচ্ছু পারে না… দু’একটা ছবিতে চলবে!” “বাবার নামে দাগ লাগুক, সেটা কখনও হতে দেব না”— রঞ্জিত-কন্যা কোয়েলের অকপট স্বীকারোক্তি! বাবার জনপ্রিয়তার ভারই ছিল বড়, তাই প্রথম দিন থেকেই নিজেকে কঠোর নিয়মে বেঁধেছিলেন মেয়ে!

টলিউডের অন্যতম প্রিয় মুখ রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mallick) ও কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick), বাবা-মেয়ের এই জুটি বহু বছর পর আবারও ফিরেছে বড় পর্দায়। প্রায় ১৬ বছর পর তাঁদের একসঙ্গে দেখা যাবে ‘স্বার্থপর’ ছবিতে। তবে এবার সম্পর্কের সমীকরণ একেবারে অন্য রকম। যেখানে রঞ্জিত মল্লিক কোনও বাবার ভূমিকায় নয়, বরং এক উকিলের চরিত্রে। এই নতুন সমীকরণ নিয়েই দীপাবলির মরশুমে জমে উঠেছে উৎসাহ। রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে হিসেবে একটা দায়িত্ব এবং ভয় কাজ করা স্বাভাবিক, কোয়েলের কি সেটা কখনও হয়েছে?

বর্তমানে যতই কোয়েল মল্লিক একটা আলাদা নাম হোক বা ইন্ডাস্ট্রিতে টলিকুইন বলতেই সবাই তাঁকে চেনে, কখনও কি তাঁর এই সাফল্যের পথে বাবার জনপ্রিয়তা বা বাবার নাম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এই নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুললেন কোয়েল। অভিনেত্রীর কথায়, “যখন পা রেখেছিলাম টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে, তখন সবে ২০ বছর বয়স। তখন বাবা একটা কথাই বলেছিলেন যে, আমার একটা ছবির পেছনে অনেকের রোজগার এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ থাকবে। সুতরাং, আমি কখনওই সেটা ব্যর্থ হতে দিতে পারব না।”

তাঁর কথায়, সিনেমায় আসার ইচ্ছে খুব একটা ছিল না, কিন্তু ভাগ্যই তাঁকে এই পথে এনেছিল। তবে কোয়েলের সবথেকে বড় সংকল্প ছিল বাবার নাম যেন কখনও তাঁর কারণে কলঙ্কিত না হয়। তাঁর নিজের ভাষায়, “সত্যি বলতে আমার তেমন কোনও ইচ্ছে ছিল না এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসার কিন্তু ভাগ্যের জন্যই এসেছি, তবে ঠিক করেই নিয়েছিলাম প্রথম দিন থেকে যে বাবার নামে কখনওই দাগ লাগতে দেব না। লোকে বলবে ‘রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে খারাপ’, ‘কোয়েল মল্লিক কিচ্ছু পারে না, বাবার কলঙ্ক’— এইসব কথা যেন কানে না আসে।”

ছোট থেকেই বাবার কঠোর পরামর্শ আর শৃঙ্খলাই তাঁকে দৃঢ় করেছে। তাঁর অভিনয়জীবনের পথে অবশ্য তিনি কখনও বাবার জনপ্রিয়তার ছায়ায় আটকে পড়েননি। বরং তিনি নিজের যোগ্যতায় টলিউডে এক আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। তবু একটা আফসোস রয়ে গেছে, যেটা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন— “আমার আফসোস নেই যে কেন ইন্ডাস্ট্রিতে বাবাকে নিয়ে উত্তম কুমারের মতো আলোচনা হয় না। কারণ আমার মনে আছে, মহানায়ক মারা যাওয়ার পর যখন প্রেক্ষাগৃহ ফাঁকা হতে শুরু করেছিল, বাবার সব ব্লকবাস্টার ছবি কিন্তু হালটা ধরেছিল!

সেই দিক থেকে লোকের ভালোবাসাই আসল, এটা আমিও মানি। কোনও ছবি হিট হলে যেমন বাবাকে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত হতে দেখিনি, তেমন ফ্লপ হলেও মন খারাপ করতে দেখিনি। যদিও একটা অভিমান আছে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যে– অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে একজন অভিনেতাকে নিয়ে বাণিজ্যিক ছবির বাইরেও অন্য ধারার ছবিতে পরীক্ষা করা হয়, যেটা বাংলায় হয় না।” এই প্রসঙ্গে রঞ্জিত মল্লিকও নিজে বলেছেন এক মূল্যবান কথা, যা কোয়েলের পথচলার মেরুদণ্ড হয়ে আছে আজও।

আরও পড়ুনঃ শ্যামাপুজোর মঞ্চে জিন্স পরে শ্যামাসংগীত! ইমন চক্রবর্তীকে তীব্র কটা’ক্ষ নেটপাড়ার! গায়িকার স্বাধীনচেতা বার্তায় বি’রক্ত সোশ্যাল মিডিয়া

তাঁর কথায়, “কোয়েল যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসে, একটা কথাই বলেছিলাম যে আমার নাম করে একটা আর খুব বেশি হলে দুটো ছবিতে পার পেয়ে যাবি কিন্তু এরপর দর্শক ছেড়ে কথা বলবে না। একটা ছবির পেছনেও যেমন অনেক মানুষ জড়িয়ে থাকে আবার মুক্তির অপেক্ষাতেই অনেক মানুষ থাকে, তাই তাদেরকে কষ্ট দিতে পারব না আমরা।” আজ সেই শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনেই গড়ে উঠেছে ‘স্বার্থপর’-এর মতো একটা ছবি, যেখানে বাবা-মেয়ের বন্ধন আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে তাঁরা শুধু পর্দায় নয়, জীবনের মঞ্চেও একে অপরের শক্তি।