“বাবা এখনও আমার কাছে পাহাড় সমান, চাইলেও অনেক কথা বাবাকে বলা হয়ে ওঠেনি… আজও নয়!” “যতই কষ্ট হোক ওই কথাগুলো তাঁকে বলতে পারিনি, তাই চুপ করে গেছি!”— অকপট কোয়েল মল্লিক! কী এমন কথা, আর কেনই বা এখনও বাবা রঞ্জিত মল্লিককে বলে হয়নি কোয়েলের?

বর্তমান সমাজে পারিবারিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আগে যেখানে একান্নবর্তী পরিবারে সবাই মিলেমিশে থাকতো, সেখানে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট ছোট নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকেন, সন্তানদের একা সময় কাটাতে হয়, কেউ কেউ সম্পূর্ণ একা বড় হয় ভাইবোন ছাড়াই। এর ফলে অনেক সন্তানের মধ্যেই একটা আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব গড়ে উঠছে। তারা শিখে ফেলছে যে সব কিছু আমার, শুধু আমার। এমন মানসিকতা থেকে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববোধ অনেকটা কমে যাচ্ছে।

একসময় পারস্পরিক সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে তুলছে। এই বিষয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick)। তিনি নিজে বড় হয়েছেন এক বনেদি যৌথ পরিবারে, যেখানে অনেক ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি অনুভব করেন, সম্পর্ক মানেই সব সময় নিখুঁত হবে এমনটা নয়। তিনি বলেন, “কোনও সম্পর্ক থেকে এটা আশা রাখা যায় না যে, আমি যতটা তাঁকে দিচ্ছে সেও আমায় ঠিক ততটাই দেবে”।

অনেক সময় আমাদের মধ্যে একধরনের ভুল ধারণা তৈরি হয়, আমরা ভাবি যে সামনের মানুষটি আমাদের মনের কথা এমনিই বুঝে নেবে। অথচ বাস্তবে, মুখ খুলে নিজের অনুভূতি বলা খুবই জরুরি। কোয়েলের কথায়, “আমার মনে হয় যে কারোর কোনও কথায় খারাপ লাগলে মুখোমুখি বসে শান্তভাবে সবটা বলে মিটিয়ে নেওয়াই ভালো। তাঁকে যদি বলি যে, এটা কেন করলি বা আমি খুব কষ্ট পেয়েছি– তাহলে সেও নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে। সেটা না করে আমরা উল্টে মনে করি যে, অপরদিকে লোকটা আমাদের মনের কথা বুঝে নেবে।

শুধুমাত্র মন খুলে কথা না বলতে পারার জন্যই অনেক সম্পর্কই আজ ভাঙতে বসেছে। অবশ্যই মন খুলে কথা বলতে সাহস লাগে, আমিও বাবাকে অনেক কথা বলতে পারি না বা বলি না ইচ্ছে করেই। সেটার পিছনে কারণ রয়েছে যথেষ্ট।” উল্লেখ্য, বনেদি পরিবারের মেয়ে ছাড়াও কোয়েলের একটা পরিচয় যে তিনি জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের কন্যা। মেয়ে হিসেবে তিনি যেমন বাবার কাছে খুব আদরের, তেমন বকাও খান আজ পর্যন্ত। কোয়েল এখন নিজেই দুই ছেলে মেয়ের মা, তাও বাবার কাছে তিনি আজও ছোট্ট কোয়েল।

মেয়ে কোয়েলও বাবাকে ভীষণ ভালোবাসেন। অভিনয় জীবনের শুরু থেকেই কোয়েল এটা মাথায় রেখেছেন যে, নিজে এমন কিছু কাজ করবেন না যেটার কারণে বাবাকে ছোট হতে হয়। এদিন কোয়েল তাই আরও বলেছেন, “বাবাকে ছোট থেকেই অনেক কথা বলতে পারিনি যতই কষ্ট হোক, কারণ আমি জানতাম যে আমি যত না কষ্ট পাচ্ছি তার থেকে বাবা হাজারগুণ কষ্ট পাবে। এখনও বলি না অনেককিছু, একটা বয়সের পর উচিৎ নয় বাবা-মকে নিজেদের সব কথা বলে চিন্তায় ফেলে দেওয়া।”

আরও পড়ুনঃ “দুই-আড়াই বছরের অভ্যাস কি আর ভোলা যায়?” “ফাঁকা ফাঁকা লাগে এখন…কথাগ্নি ফ্যানরা আজও আমাদের খোঁজে, একটা ফানুস নাম লিখে উড়িয়ে দিও”— ‘কথা’ শেষ হতেই আবেগে ভেসে গেলেন সাহেব, পাশে সুস্মিতা! আবার কবে ফিরছেন নতুন কাজ নিয়ে?

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, যেখানে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে, সেখানে কোয়েলের এই উপলব্ধিগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ যেদিকে এগোচ্ছে, সেখানে প্রযুক্তি আর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যত্ব, সহানুভূতি আর বোঝাপড়ার দিকটাও ধরে রাখা খুব জরুরি। হয়তো যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমে এসেছে, কিন্তু সম্পর্কের গভীরতা যেন না কমে যায়, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় হতে পারে– মন খুলে কথা বলা, দায়িত্ব নেওয়া, আর একে অপরের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব বজায় রাখা।