“নতুনরা চারিদিকে যন্ত্র লাগিয়ে গান বানাচ্ছে, আমি গানটা নিজের মুখ আর গলা দিয়েই করি!” “ওদের সঙ্গে কম্পিটিশন নেই, আমার গান দিয়ে ভিউ পাচ্ছে!”— আধুনিক গানের যান্ত্রিকতা প্রসঙ্গে নতুন প্রজন্মের গায়কদের নিয়ে বিস্ফো’রক মন্তব্য অভিজিৎ ভট্টাচার্যর!

বলিউডের ৯০-এর দশক মানেই ছিল এক রোম্যান্টিক গানের স্বর্ণযুগ। সেই সময় শাহরুখ খান, সলমন খান বা আমির খানের ঠোঁটে যে কণ্ঠগুলো প্রতিধ্বনিত হত, তার মধ্যে অন্যতম ছিল গায়ক ‘অভিজিৎ ভট্টাচার্য’র (Abhijeet Bhattacharya) গলা। অলকা ইয়াগনিক এবং উদিত নারায়ণের জনপ্রিয়তাকে পাল্লা দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই বাঙালি শিল্পী। তাঁর কণ্ঠে ‘তুমহে যো মেঁনে দেখা’ বা ‘মেঁ কোই অ্যায়সা গীত গাউ’ আজও এক প্রজন্মের কাছে আবেগ।

বলিউডের বাদশার মুখে গানগুলোর এমন নিখুঁতভাবে মিশে যেত যে দর্শক বুঝতেই পারতেন না আসল গলাটা কার! অভিজিৎ শুধু হিন্দি গানে নয়, বাংলা ছবিতেও সমান সাফল্য পেয়েছিলেন। দেবের মতো তারকাদের ছবিতে তাঁর গাওয়া গান জনপ্রিয় হয়েছিল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। তাঁর কণ্ঠের বিশেষত্ব ছিল একধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা, যা যান্ত্রিকতার স্পর্শ পায়নি। সেই কারণেই আজও তাঁর পুরোনো গানগুলি নতুন প্রজন্মের কাছেও পরিচিত।

যদিও শিল্পী নিজে তাতে খানিক অভিমান লুকিয়ে রাখেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এসে তিনি অকপটে জানান, বর্তমান সংগীতজগৎ তাঁকে হতাশ করে। তাঁর মতে, আজকের দিনে নতুন সঙ্গীতশিল্পীরা নিজের কণ্ঠে নয়, বরং যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে গান বানাচ্ছেন। অভিজিৎ বলেন, “নতুনদের দেখি চারিদিকে যন্ত্র লাগানো, যান্ত্রিক গান তৈরি করে। আমি গানটা গাই নিজের মুখ আর গলা দিয়ে। তাতে যদি আমার গান হিট না হয় বা কেউ না শোনে, আমার কোনও আফসোস নেই।

নতুনদের ভিউর সঙ্গে কি আমি কম্পিটিশন করতে যাব? আমার ভিউ লাগবে না, বরং আমার গান দিয়ে ওরা ভিউ পাচ্ছে!” তাঁর কথাতেই যেন ধরা পড়ে আজকের প্রযুক্তিনির্ভর গানের প্রতি একরাশ আক্ষেপ। তবে তিনি এটাও বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো গানের গুরুত্ব ফের বেড়েছে। উদাহরণ টেনে তিনি জানান, প্রায় দশ বছর আগে তাঁর গাওয়া ‘দিল কা জো হাল হ্যায়’ গানটি তখন খুব একটা শ্রোতা পায়নি, কিন্তু আজ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তা আবার ভাইরাল হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ “আমি যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই গার্গীকে পর্দায় তুলে ধরেছি! আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কারর নেই!” “তারাসুন্দরীকে পরের প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার দায় আমারও আছে” অকপট গার্গী রায়চৌধুরী

তাঁর ভাষায় “আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে ‘দিল কা জো হাল হ্যায়’ গেয়েছিলাম। তখন তেমন সাড়া না পেলেও, আজকে সোশ্যাল মিডিয়া আর রিলের যুগে তুমুল জনপ্রিয়তা পেল! ৮ থেকে ৮০ এখন সবার মুখে এই গানটা, কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম হয়তো আমাকে ঠিক করে চেনেও না!” বলিউডে পুনর্নির্মিত গানের প্রবণতা নিয়ে তিনি খানিক হতাশ। তাঁর মতে, পুরনো গানগুলির আবেগ এবং সরলতাকে বিকৃত করে শুধুই ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবুও, অভিজিৎ বিশ্বাস করেন সত্যিকারের শিল্প চিরকাল টিকে থাকে।