বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম বর্ষীয়ান অভিনেতা ‘বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়’ (Biplab Chatterjee)— যাঁকে সকলে চেনেন তাঁর স্পষ্টভাষী, অকপট মনোভাবের জন্য। তিনি সবসময়ই সত্যিটা মুখের ওপর বলতে দ্বিধা করেন না, আর সেটাই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। যতই কঠোর মনে হোক তাঁর ভাষা, আসলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত মানবিক। বছরের পর বছর দর্শক তাঁকে ভিলেনের চরিত্রে দেখলেও, পর্দার বাইরের বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বরাবরই একজন সোজাসাপ্টা এবং বাস্তববাদী মানুষ, যিনি কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে পারেননি।
সম্প্রতি শুরু হয়েছে ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (KIFF 2025), কিন্তু সেই উৎসবে আমন্ত্রিত হননি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়! সেই প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি জানিয়েছেন, “আমি নাকি লেজেন্ড! কিন্তু যারা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করছে, তাদের সেই শিক্ষা-দীক্ষা নেই বলে তারা মনে করে না সেটা।” তাঁর কণ্ঠে আক্ষেপের সুর স্পষ্ট হলেও, তাতে কোনও রাগ নেই— বরং আছে হতাশা। তিনি বলেন, এক সময় যে চলচ্চিত্র উৎসব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় উদ্বোধন করতেন, আজ সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ শাহাজান করছেন!
কথার ভঙ্গিতেই ফুটে উঠেছে একজন শিল্পীর প্রবল বেদনা। সরকার বা চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষের তরফে যোগাযোগ না করার বিষয়েও তিনি অত্যন্ত বাস্তবভিত্তিকভাবে উত্তর দেন। তাঁর কথায়, “আমায় কেন করবে? আমি তো সরকার বিপক্ষের লোক। সরকারের বিচ্যুতিগুলোই তুলে ধরি।” অতীতে তিনি যেমন নিজের দলের ভুলত্রুটি প্রকাশ্যে বলেছেন, আজও সেই ধারা বজায় রেখেছেন। তাঁর মতে, সত্য কথা সহ্য করার ক্ষমতা খুব কম মানুষের মধ্যেই থাকে, তাই তিনি অনেকেরই অস্বস্তির কারণ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র বা তাঁর গান, কবিতা, আঁকার প্রসঙ্গ উঠতেই বর্ষীয়ান অভিনেতার বক্তব্য ছিল আরও তীক্ষ্ণ। তিনি বলেন, “আমি এই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না! আমি এখনও ভদ্রমহিলা বলছি, কারণ আমার শিক্ষাদীক্ষা আছে। শেক্সপিয়ার আর রবীন্দ্রনাথের আগে বা পরেই ওনার স্থান, সেরা দার্শনিক উনি!” তাঁর প্রতিটি শব্দে বিদ্রুপ লুকোনো থাকলেও, তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে তাঁর গভীর উদ্বেগ— তিনি মনে করেন, যখন মানুষ প্রশ্ন তোলা বন্ধ করে দেয়, তখনই সমাজের অবক্ষয় শুরু হয়।
আরও পড়ুনঃ “মমতা সবার পাশে দাঁড়ায়, অতীতে এমন মুখ্যমন্ত্রী দেখিনি!”— আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বঙ্গ-বিভূষণ’ পেয়ে আপ্লুত আরতি মুখোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ! শিল্পীর মন্তব্যে সমাজ মাধ্যমে শুরু বিতর্কের ঝড়! প্রশ্ন উঠছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরন নিয়ে!
তিনি বলেন, “সব ছেড়ে দিয়েছি, শিক্ষা থেকে সংস্কৃতি…রাজ্যটার আর কিছু হওয়ার নেই।” তাঁর চোখে আজকের চলচ্চিত্র উৎসব আর সেই পুরনো ঐতিহ্য বহন করছে না। তিনি মনে করেন, যদি এই পথেই উৎসব চলতে থাকে, তবে তার ভবিষ্যৎ ঘন অন্ধকার। তাঁর মতে, উৎসবের সিনেমা বাছাই থেকে সিদ্ধান্ত— সবই এখন ক্ষমতার কেন্দ্র নবান্নের নির্দেশে নির্ধারিত হয়। তবুও তাঁর কণ্ঠে কোনো হিংসা নেই, আছে শুধু গভীর মনখারাপ— এক যুগের শিল্পী হয়ে, নিজের সময়ের মূল্য হারিয়ে যেতে দেখার দুঃখ।






